করোনভাইরাস মহামারীর সময় আমাদের সকলকে যেমন অন্য জীবনধারার সাথে মানিয়ে চলতে হয়েছিল, তেমন চিড়িয়াখানার প্রাণী যারা হঠাৎ করে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখে অভ্যস্ত, তা আর দেখতে পেত না তাদের মধ্যেও পরিবর্তন দেখা গেল। গত বছর প্রকাশিত একটি সমীক্ষায়, গবেষকরা আবিষ্কার করেছিলেন যে বোনোবোস, শিম্পাঞ্জি, পশ্চিমের নিম্নভূমির গরিলা এবং জলপাই বেবুনের মতো প্রাইমেটরা কীভাবে সেই পরিবর্তনে প্রতিক্রিয়া দেখায়। তাদের আচরণ দেখে তারা বোঝেন যে প্রাণীরা বিশ্রাম এবং খাওয়া সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অভ্যাস পরিবর্তন করেছিল।
দর্শনার্থীদের মিথস্ক্রিয়া চিড়িয়াখানার প্রাণীদের কল্যাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। তবুও এই মিথস্ক্রিয়াগুলির ইতিবাচক বা নেতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই গবেষকরা বেশ আগ্রহী ছিলেন যখন চিড়িয়াখানায় ভিড় ছিল না, তখন প্রাণীদের আচরণ কেমন ছিল, সে পার্থক্য জানতে। দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানা এবং পার্কগুলিতে প্রাণীদের আচরণকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে তা বোঝার একটি সীমাবদ্ধতা হল যে তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য জনসাধারণের থেকে খুব কম বিচ্ছিন্ন থাকে। দর্শনার্থীদের ফিরে আসার আগে এবং পরে, ইউরোপে Twycross Zoo এবং Knowsley Safari-তে পর্যবেক্ষণ রেকর্ড করা হয়েছিল। বেশ কয়েক মাস এবং একাধিক খোলা এবং বন্ধের সময়কালে, প্রাইমেটদের আচরণে লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল, যা প্রাণীভেদে পরিবর্তিত দেখা গিয়েছিল।
দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানায় ফিরে আসতে শুরু করলে, দেখা গেল বোনোবোস এবং গরিলারা কম সময় একা একা কাটাতে লাগল, অন্যদিকে গরিলারাও বিশ্রামের সময় কমিয়ে দিল । শিম্পাঞ্জিরা, চিড়িয়াখানা পুনরায় খোলার সময় আরও বেশি খাবার খেতে লাগল এবং তাদের ঘেরাটোপের মধ্যে আরও সময় কাটাতে লাগল। সাফারি পার্কের জলপাই বেবুনদের ক্ষেত্রে দেখা গেল যখন দর্শনার্থীরা ফিরে আসে তখন তাদের যৌন আচরণ কমল এবং আধিপত্যপূর্ণ আচরণে লিপ্ত হতে দেখা গেল। গবেষকরা পরামর্শ দেন যে দর্শনার্থীদের ফিরে আসা শিম্পাঞ্জি এবং বেবুনদের উদ্দীপিত করে, অন্যদিকে গরিলা এবং বোনোবোসের একা কম সময় কাটানো কমে যাওয়া ইতিবাচক হিসাবে দেখা যেতে পারে। একই সময়ে, গরিলা যে স্বাভাবিকভাবেই বেশি আসীন থাকে, সে ভিড়ের হওয়াতে বিশ্রামে কম সময় অতিবাহিত করেছিল।
যুক্তরাজ্যের হার্পার অ্যাডামস ইউনিভার্সিটির চিড়িয়াখানার প্রাণী কল্যাণ গবেষক অ্যালেন উইলিয়ামস বলেছেন, আচরণগত পরিবর্তন এবং দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে ঘেরাটোপ ব্যবহারের পরিবর্তনগুলি চিড়িয়াখানার প্রজাতির তাদের পরিবেশের সাথে অভিযোজনযোগ্যতাকে তুলে ধরে। পরিবেশ অনুযায়ী প্রাণীদের সক্রিয়ভাবে মানিয়ে নেওয়া, তাদের কল্যাণের জন্য সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। দলটি আরও পর্যবেক্ষণ করেছে যে জলপাই বেবুনের কাছে দর্শনার্থী সংখ্যা থ্রেশহোল্ড ছিল, যা অতিক্রম করলে প্রাণীগুলি সাফারি পার্কের পাশ দিয়ে যাওয়া গাড়িগুলি দেখে সক্রিয় এবং উদ্দীপ্ত হওয়া বন্ধ করে দেয়। ভবিষ্যতে চিড়িয়াখানা এবং সাফারি পার্ক উভয় প্রজাতির বিস্তৃত পরিসরের পাশাপাশি পৃথক প্রাণীদের মধ্যে পার্থক্যের দিকে তারা নজর দিতে পারেন বলে উইলিয়ামস জানিয়েছেন। গবেষণাটি অ্যানিম্যালস পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।