কখনো কী ভেবে দেখেছেন বিড়াল, কুকুর এমনকি ক্যাঙ্গারুর হাতের পাঞ্জার সাথে আমাদের হাতের মিল কোথায়? এদের মধ্যে অনেকের আঙুল সঙ্কুচিত বা ভিন্নভাবে অবস্থান করলেও, এই সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর পাঁচটি আঙুল রয়েছে। এখন প্রশ্ন হল কেন স্তন্যপায়ী প্রাণীর পাঁচটি আঙুল থাকে?
স্তন্যপায়ী প্রাণীরা সুপারক্লাস টেট্রাপোডার অন্তর্গত, যার মধ্যে রয়েছে সরীসৃপ, উভচর এবং পাখি। এমনকি এই শ্রেণির কিছু সদস্যদের প্রথাগত অঙ্গপ্রতঙ্গ না থাকলেও তাদের শরীরে পাঁচটি আঙুল থাকে— তিমি, সীল এবং সি লায়নের ফ্লিপারে পাঁচটি আঙুল থাকে। তবে কিছু ভিন্নতা রয়েছে যেমন ঘোড়ার মাত্র একটি পায়ের আঙুল থাকে এবং পাখিদের ডানার শেষে সংযুক্ত একটি আঙুলের হাড় থাকে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে এই প্রাণীগুলোর ভ্রূণ অবস্থায় পাঁচটি আঙুল থাকলেও তাদের জন্মের আগে সেগুলো সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। পেন স্টেটের জীববিজ্ঞানী টমাস স্টুয়ার্টের মতে এই প্রক্রিয়াটি মূলত হক্স জিন দ্বারা পরিচালিত হয়। হক্স জিন এমন প্রোটিনকে এনকোড করে যা অন্যান্য জিনের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, তাদের চালু বা বন্ধ করে। ভ্রূণ থেকে বিকাশ লাভের সময় এই জিন শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গের আকার ও স্থান নির্ধারণ করে। সুতরাং এই জিন টেট্রাপডের শরীরের কঙ্কালের প্যাটার্ন নির্দিষ্ট করে এবং সোনিক হেজহগ জিন দ্বারা তৈরি প্রোটিন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আঙুল তৈরি হয় এবং প্রাণী অনুসারে আঙুলের এই উদ্গত অংশ বা ফিঙ্গার বাড বৃদ্ধি পায় বা বা সংকুচিত হয়। পাঁচটি আঙুল থাকবে এই বৈশিষ্ট্য কখন নির্দিষ্ট হয়েছিল সে সম্বন্ধে কেউ নিশ্চিত নয়। স্টুয়ার্টের মতে প্রায় ৩৬০ মিলিয়ন বছর আগে মাছ থেকে প্রথম বিবর্তিত প্রাণীর আটটি আঙুল ছিল। তবে বেশিরভাগ জীবন্ত টেট্রাপডের পাঁচটি আঙুল ইঙ্গিত করে যে তাদের একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ রয়েছে। সমস্ত জীবিত টেট্রাপডের সাধারণ পূর্বপুরুষের পাঁচটি আঙুলের বৈশিষ্ট্যটি বিবর্তিত হয়েছে এবং সেই প্যাটার্নটি তার বংশধরদের কাছে পৌঁছেছে। গবেষকরা আরও বলেন ক্যানালাইজেশন তত্ত্ব অনুযায়ী, সময়ের সাথে সাথে, একটি জিন বা বৈশিষ্ট্য আরও স্থিতিশীল হয়ে ওঠে এবং তার পরিবর্তনের সম্ভাবনা হ্রাস পায়। যাইহোক, সমস্ত গবেষক অবশ্য ক্যানালাইজেশন ধারণার সাথে সহমত নন। গবেষকদের মধ্যে এই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন ধারণা রয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির কিম্বার্লি কুপার উল্লেখ করেছেন যে পলিড্যাক্টিলি, বা পাঁচটির বেশি আঙুল থাকা, মানুষ সহ অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে মিউটেশনের কারণে ঘটে। কেন পলিড্যাকটাইল প্রজাতির অস্তিত্ব নেই তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কুপার বলেন এর কারণ হল পলিড্যাক্টিলি একটি বিবর্তনীয় অসুবিধা। তবে এ বিষয়ে ভিন্ন মতবাদও রয়েছে।