এক হাতে বোতল ধরে, সেই হাত দিয়েই বোতলের মুখে আটকানো ছিপি খুলতে চান? নতুন উদীয়মান প্রযুক্তিতে তা সম্ভব। মানুষের মোটরপেশির কার্যক্ষমতা বাড়াতে প্রযুক্তি তৈরি করছে মোটর অগমেন্টেশন। এতে আমাদের শারীরিক সক্ষমতা বাড়িয়ে বর্তমান জৈবিক সীমাবদ্ধতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য এক্সোস্কেলিটন বা অতিরিক্ত রোবোটিক পরিধানযোগ্য যন্ত্র ব্যবহার করা হবে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকের দল পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত অংশগ্রহণকারীদের রোবোটিক ডিভাইস পরিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন যে এই নতুন প্রযুক্তি প্রত্যেকের জন্য কাজ করতে পারে। সায়েন্স রোবোটিক্সে তাদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এই ধরনের রোবোটিক যন্ত্রগুলো যেমন সুস্থ ব্যক্তিদের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে, তেমন এই একই প্রযুক্তি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিজস্ব পরিবেশে কাজ করার নতুন উপায় দেবে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (MRC) কগনিশন অ্যান্ড ব্রেন সায়েন্সেস ইউনিটের অধ্যাপক তামার মাকিন বলেছেন, প্রযুক্তি এমন যন্ত্র তৈরি করছে যা ধীরে ধীরে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠছে। এমনকি আমাদের মন এবং শরীরেও এই প্রযুক্তির ছোঁয়ায় নানা সুযোগ উন্মুক্ত করছে, যার থেকে সমাজ উপকৃত হতে পারে। এক্ষেত্রে যাতে সমস্ত ধরনের মানুষ এই প্রযুক্তির সাহায্য লাভ করে তা দেখা হয়েছে।
অধ্যাপক মাকিনের সহযোগী ড্যানি ক্লোড একটা অতিরিক্ত রোবোটিক থাম্ব, বা বুড়োআঙুল তৈরি করে মানুষের স্বাভাবিক বুড়ো আঙুলের বিপরীতে পরিয়ে দিয়েছেন। এর উদ্দেশ্য হল ব্যক্তির আঁকড়ে ধরার ক্ষমতা বাড়ানো এবং হাতের বহন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এটা পরলে এমন ধরনের কাজ করা সম্ভব যা এক হাতে চ্যালেঞ্জিং বা সম্পূর্ণ করা অসম্ভব। এটা পরলে অন্য লোকেদের সাহায্য ছাড়াই জটিল একাধিক-হাতের কাজ সম্পাদন করা যেতে পারে। এই কৃত্রিম রোবোটিক বুড়ো আঙুল তালুতে জৈবিক বুড়ো আঙুলের বিপরীত দিকে পরিধান করা হয়, আর বুড়ো আঙুল বা পায়ের নীচে রাখা চাপ সেন্সর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ডান পায়ের আঙুলের চাপ হাতের বুড়ো আঙুলকে টেনে নেয়, বাম পায়ের আঙুল দিয়ে চাপ দিলে কৃত্রিম বুড়ো আঙুল, আঙুলের দিকে যায়। চাপ অনুযায়ী এই আঙুলের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রিত হয় আর চাপ ছেড়ে দিলে এটা তার অবস্থানে ফিরে যায়।
গবেষকরা তিন থেকে ছিয়ানব্বই বছর বয়সী ৫৯৬ জন অংশগ্রহণকারীদের হাতের তালুতে এই রোবোটিক আঙুল লাগিয়ে দেখেছেন ৬০- ৭০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী তা শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে, বাকিরা একটু অভ্যাসের পর কাজগুলো করতে সক্ষম হচ্ছে। গবেষকদের আশা এই ধরনের যন্ত্র সুস্থ মানুষ, বয়স্ক মানুষ, প্রতিবন্ধী মানুষ সকলের জন্যই উপকারী হবে।