ডালাসের ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের বিজ্ঞানীরা কিডনি কোশে এক প্রক্রিয়া চিহ্নিত করেছেন যা অবাঞ্ছিত বস্তু বের করে দেয়, যার ফলে কোশগুলো নিজেদের পুনরুজ্জীবিত করে সুস্থ থাকে। এই অনন্য নিজে পুনরুজ্জীবীত হওয়ার পদ্ধতি, শরীরের অন্যান্য কলাতে পরিচিত পুনর্জন্ম প্রক্রিয়া থেকে আলাদা। আঘাত বা অসুস্থ না হলে একটা মানুষের জীবনভর কিডনি কীভাবে সুস্থ থেকে কাজ চালু রাখে এই গবেষণা তার ওপর আলোকপাত করেছে। গবেষকরা সম্প্রতি নেচার ন্যানোটেকনোলজিতে প্রকাশিত এই গবেষণায় তাদের প্রাপ্ত ফলাফল বিস্তারিত জানিয়েছেন।
যকৃত এবং ত্বকে যেমন কোশ বিভাজন হয়ে নতুন কোশ তৈরি হয় এবং নির্দিষ্ট অঙ্গ পুনরুত্পাদন হয়, কিডনির প্রক্সিমাল টিউবুলের কোষগুলোতে মাইটোটিক বিভাজন হয় না, ফলে নতুন কোশ তৈরি হয় না। হালকা আঘাত বা রোগের ক্ষেত্রে, কিডনির কোশগুলির সীমিত মেরামত ক্ষমতা থাকে এবং কিডনির স্টেম কোশ একটা সীমা অবধি নতুন কিডনি কোশ তৈরি করতে পারে। বেশিরভাগ পরিস্থিতিতে, কিডনি কোশ গুরুতরভাবে আহত হলে, তারা মরে যায় আর পুনরুজ্জীবীত হতে পারে না। ফলে কিডনি সময়ের সাথে সাথে কাজ করতে ব্যর্থ হয়। বর্তমানে চিকিৎসায় এই কিডনি খারাপ হওয়ার অগ্রগতি ধীর করা হয়, তবে এই অঙ্গ গুরুতরভাবে আহত হলে বা দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকরা সহজে মেরামত করতে পারেন না।
১৫ বছর ধরে ঝেং, রিসার্চ সায়েন্টিস্ট ও গবেষণার প্রধান লেখক গ্লোমেরুলার পরিস্রাবণ কীভাবে হয়, লিভারের রোগের প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং ক্যান্সারের ওষুধ সঠিক লক্ষ্যে সরবরাহের জন্য ইমেজিং এজেন্ট হিসাবে সোনার ন্যানো পার্টিকেল -এর বায়োমেডিকাল ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করছেন। কীভাবে সোনার ন্যানো পার্টিকেলগুলি কিডনি দ্বারা ফিল্টার হয়ে, প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে পরিষ্কার করা হয় তা বুঝতে গিয়ে দেখেছেন, যে সোনার ন্যানো পার্টিকেলগুলো সাধারণত কিডনিতে গ্লোমেরুলাসের মধ্য দিয়ে গিয়ে প্রক্সিমাল টিউবুলে যায়। প্রক্সিমাল টিউবুল কিডনির ৫০% – এর বেশি অংশ। প্রক্সিমাল টিউবুলার এপিথেলিয়াল কোষগুলো ন্যানো পার্টিকেল অন্তঃস্থ করে নিচ্ছে, শেষ পর্যন্ত ন্যানো পার্টিকেল প্রস্রাবের সাথে শরীর থেকে নির্গত হয়ে যাচ্ছে।
প্রক্সিমাল টিউবুলার কোশগুলো বাইরের দিকে লুমিনাল মেমব্রেনের বাহ্যিক স্ফীত অংশ তৈরি করেছিল যাতে কেবল সোনার ন্যানো পার্টিকেলই নয়, লাইসোসোম, মাইটোকন্ড্রিয়া, এন্ডোপ্লাসমিক রেটিকুলাম, কোশের অন্তঃস্থ অংশের উপাদান পাওয়া যায়। এই বহিষ্কার প্রক্রিয়ায় কোন কোশীয় পর্দা থাকে না, স্বাভাবিক কোশ থেকে পুরানো বস্তু সরিয়ে দেয় এবং কোশগুলো নিজেদের পরিষ্কার করে নেয়, তাতে বর্হিগত বস্তু যেমন সোনার ন্যানো পার্টিকেল থাকুক বা না থাকুক। এটি একটি অন্তর্নিহিত, সক্রিয় প্রক্রিয়া যা এই কোশগুলোকে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকতে এবং সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। কিডনি কোশের এই নতুন আবিষ্কৃত ধর্ম চিকিৎসা ক্ষেত্রে কাজে লাগার বিরাট সম্ভাবনা থাকতে পারে।