আমরা অনেক সময়ে কথা বলার সময় উপযুক্ত শব্দ খুঁজে পাইনা, কাউকে বলার সময় খুব সাধারণ কোনো জিনিস বা ব্যক্তির নাম অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই মনে পড়েনা। যত বয়স বাড়ে তত যেন এই ভুলে যাওয়া জাঁকিয়ে বসে। সঠিক শব্দ খুঁজে পেতে ঘন ঘন অসুবিধা আলজাইমার্স রোগের প্রারম্ভিক পর্যায়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মস্তিষ্ক পরিবর্তনের সংকেত দিতে পারে। টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়েছে শব্দ খুঁজে পেতে অসুবিধার তুলনায় কথা বলার গতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের সঠিক সূচক। গবেষকরা ১৮ থেকে ৯০ বছর বয়সী ১২৫ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ককে একটি দৃশ্যের বিস্তারিত বর্ণনা দিতে বলেছেন। এই বর্ণনাগুলোর রেকর্ডিং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) সফটওয়্যার দ্বারা বিশ্লেষণ করে- কথা বলার গতি, শব্দের মধ্যে বিরতির সময়কাল এবং ব্যবহৃত শব্দের বৈচিত্র্যে দেখা হয়েছিল।
এছাড়াও একাগ্রতা, চিন্তার গতি এবং পরিকল্পনা করে কার্য সম্পাদন করার ক্ষমতার পরীক্ষাগুলো অংশগ্রহণকারীরা সম্পন্ন করেন। এতে একজন ব্যক্তির দৈনন্দিন কথা বলার গতির ক্ষেত্রে বয়স-সম্পর্কিত হ্রাস দেখা যায়, যেখানে সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়ার চেয়েও বেশি গতির হ্রাস দেখা যায়। এই অধ্যয়নে “পিকচার-ওয়ার্ড ইন্টারফেয়ারেন্স টাস্ক” -এ একটা বস্তুর নামকরণের দুটো ধাপ আলাদাভাবে ডিজাইন করা হয়েছে – সঠিক শব্দ খুঁজে বের করা এবং মুখকে নির্দেশ দেওয়া যে কীভাবে এটা উচ্চস্বরে বলতে হবে। অংশগ্রহণকারীদের দৈনন্দিন ব্যবহারের নানা জিনিসের ছবি দেখানোর সাথে সাথে কানে অডিও ক্লিপ শোনানো হয়, যাতে ঐ জিনিসের সঙ্গে মিল আছে এমন কোনো শব্দ বা শব্দের সাথে ছন্দ মেলানো শব্দ থাকে। হয়তো ঝাঁটার ছবি দেখানো হল, সাথে শব্দ বলা হল ন্যাতা বা ঝাঁটার সাথে ছন্দ মিলিয়ে ডাঁটা। দেখা গেছে বয়স্কদের ক্ষেত্রে ছবির নাম মনে করতে বেশি সময় লাগছে। দেখা গেছে বয়সের সাথে সাথে চেনা শব্দের স্মৃতি পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জের তুলনায় বৃহত্তর জ্ঞানীয় এবং ভাষাগত প্রক্রিয়াকরণের গতি ধীর হয়ে যাচ্ছে ।
মৌখিক সাবলীলতার পরীক্ষায় একটা নির্দিষ্ট বিভাগ যেমন প্রাণী বা ফল হতে পারে তার থেকে যতটা সম্ভব শব্দ তৈরি করতে বলা বা একটা নির্দিষ্ট অক্ষর দিয়ে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে শব্দ বলা শুরু করতে হবে। এটা স্বাভাবিক কথা বলার সময় জড়িত প্রক্রিয়ায় একজনের শব্দভাণ্ডার থেকে শব্দের সক্রিয় পুনরুদ্ধার এবং উত্পাদন। এই পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে কোনো জিনিসের নাম কত তাড়াতড়ি ঠিকভাবে মনে ও মুখে আসছে তা বোঝা যায়। আমাদের অনেক সময় কোনো কথা জিভে আসে কিন্তু মুখে আসে না। এটা আংশিক স্মরণ এবং শব্দটি পরিচিত হওয়ার অনুভূতি সত্ত্বেও স্মৃতি থেকে এই শব্দ পুনরুদ্ধার করার অস্থায়ী অক্ষমতা।
২০২২ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে মৌখিক সাবলীল কথা বলার ক্ষমতা কিন্তু স্বাভাবিক বার্ধক্যের সাথে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায় না। কথা বলার এই দুর্বলতা আলঝাইমারের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ নির্দেশ করতে পারে। এই পরীক্ষাগুলো প্রয়োজনীয় কারণ বয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে শব্দ পুনরুদ্ধারের ক্ষমতার সাধারণ পরিবর্তন নাকি স্নায়ুর অবক্ষয় তা ডাক্তারদের শনাক্ত করতে এবং সম্ভাব্য নিউরোডিজেনারেটিভ অবস্থা নির্ণয় করতে সাহায্য করবে। মৌখিক সাবলীলতার ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চল, ভাষা, স্মৃতি এবং কার্যনির্বাহী অঞ্চল যুক্ত তাই মস্তিষ্কের কোন অঞ্চলগুলি জ্ঞানীয় হ্রাস দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে এই পরীক্ষাগুলো সে সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি দিতে পারে।