অ্যান্টার্কটিকার উপরে ওজোন স্তরে যে গর্ত রয়েছে সেটা এই বছরে একটু বেশি তাড়াতাড়ি খুলে গেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে ২০২২ সালে জানুয়ারিতে হুঙ্গা টোঙ্গা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বিশ্বজুড়ে যে শকওয়েভ তৈরি হয়েছে তার ফলে এই অঘটন। ওজোন বিশেষজ্ঞরা এই বছরের শুরুর দিকেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে বিস্ফোরণের কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ৫০ মিলিয়ন টন জলীয় বাষ্প প্রবেশ করার ফলে ভবিষ্যতে পৃথিবীর প্রতিরক্ষামূলক ওজোন স্তরের উপর এর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়তে পারে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্তর যেখানে ওজোন স্তর রয়েছে তাকে বলে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার। সমুদ্রের নীচের আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের ফলে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে জলীয় বাষ্পের ঘনত্ব ১০% বৃদ্ধি পেয়েছে। নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানের প্রধান বিজ্ঞানী পল নিউম্যানের মতে, স্ট্রাটোস্ফিয়ার “উল্লেখযোগ্যভাবে শীতল” হয়েছে, যা ওজোন স্তরের জন্য বিপদ ডেকে এনেছে। ইউরোপীয় পরিবেশ পর্যবেক্ষণ সংস্থা কোপার্নিকাস বলে জুলাইয়ের শুরুতে অ্যান্টার্কটিকার উপরে ওজোনের ঘনত্ব অত্যন্ত কমে যায়। বৈজ্ঞানিক পরিমাপ শুরু হওয়ার পর থেকে বিগত ৪৩ বছরে মাত্র বারো বার ওজোন স্তরে এই ধরনের ক্ষতি এত তাড়াতাড়ি শুরু হয়। তথ্য অনুসারে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে ওজোন গর্তের ব্যাপ্তি রেকর্ড অনু্যায়ী দশম স্থানে রয়েছে। বর্তমানে, গর্তটির আয়তন ৬ মিলিয়ন বর্গ মাইলেরও বেশি। অ্যান্টার্কটিকায় বসন্তের সূচনার সাথে সাথে তাপমাত্রা উষ্ণ হতে শুরু করবে তাই সেপ্টেম্বরের শেষ অবধি গর্তটা আরো বড়ো হতে থাকবে তারপর গর্তটি বন্ধ হতে কমপক্ষে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত সময় লাগবে কিন্তু বিজ্ঞানীরা মনে করেন আরো বেশি সময় লাগতে পারে। স্ট্রাটোস্ফিয়ারে জলীয় বাষ্পের বর্ধিত ঘনত্বের ফলে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তর শীতল হয় এবং মেরুর দিকে মেঘ গঠিত হয়। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে ৯ থেকে ১৫ মাইল উচ্চতায় তৈরি হওয়া এই ভয়ঙ্কর মেঘপুঞ্জ এমন এক রাসায়নিক পরিবেশ সৃষ্টি করে যার ফলে স্ট্রাটোস্ফিয়ারে উপস্থিত ওজোন ডিপ্লিটিং সাবস্ট্যান্স (ODS) ওজোন স্তরের ক্ষতি করে। যদিও এই পদার্থগুলোর বেশিরভাগ, যেমন ক্লোরোফ্লুরোকার্বন এবং হাইড্রোফ্লোরোকার্বন ১৯৮৭ সালের মন্ট্রিল প্রোটোকল দ্বারা নিষিদ্ধ করা হয়েছে তবুও প্রকৃতিতে তাদের ভাঙতে কয়েক দশক সময় লেগে যায় এবং বায়ুমণ্ডলে তাদের ঘনত্ব এখনও বেশি। হুঙ্গা টোঙ্গা অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনাটি বিজ্ঞানীদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন ধরনের কারণ পূর্বে কোনো আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বায়ুমণ্ডলে এত বেশি জলীয় বাষ্পের অনুপ্রবেশ ঘটেনি। বিগত তিন বছর খুব বড়ো এবং দীর্ঘস্থায়ী ওজোন গর্ত দেখা গিয়েছিল, যদিও এই গর্তগুলো অনেক পরে হয়েছিল। বিজ্ঞানীদের মতে যদিও বায়ুমণ্ডলে ওজোন ক্ষয়কারী পদার্থের ঘনত্ব ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে তবু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ওজোন কমে যাচ্ছে। বায়ুমণ্ডলের প্রক্রিয়াগুলো বেশ জটিল, কারণ যখন পৃথিবীর পৃষ্ঠের কাছাকাছি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন স্ট্রাটোস্ফিয়ার শীতল হচ্ছে— এবং এর ফলে ওজোন স্তরে আরও ক্ষতি হচ্ছে৷ তবে হুঙ্গা টোঙ্গা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে স্ট্রাটোস্ফিয়ারে প্রবেশ করা জলীয় বাষ্প ওজোন স্তরের ক্ষতির একটা কারণ হতে পারে।