উত্তর ক্যারোলিনা থেকে ব্রাজিল পর্যন্ত পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগরের খুব সাধারণ একটা মাছ, হগফিশ তার রঙ পরিবর্তনকারী ত্বকের জন্য পরিচিত। তাদের চারপাশের প্রবাল, বালি বা পাথরের সাথে নিমেষে মিশে যাওয়ার জন্য প্রজাতিটি তাদের রঙ পরিবর্তন করে- কখনো সাদা, কখনো বা গোল গোল ফোঁটার মতো আবার কখনো লালচে-বাদামী। নেচার কমিউনিকেশনস প্রকাশিত একটি গবেষণায থেকে জানা যায় যে কিছু গবেষক-শোয়েকার্ট, জনসেন এবং সহকর্মীরা হগফিশের ত্বকের বিভিন্ন অংশ থেকে চামড়ার টুকরো নিয়ে মাইক্রোস্কোপের নীচে রেখে দেখেন। গবেষকরা দেখেন যে হগফিশের ত্বকে সক্রিয় অপসিন নামক একটি আলোক-সংবেদনশীল প্রোটিন রয়েছে এবং সেই প্রোটিন একটি জিন দ্বারা পরিচালিত।এই জিন তাদের চোখে পাওয়া অপসিন জিনের থেকে আলাদা। অক্টোপাস, গেকো বা অন্যান্য কিছু রঙ পরিবর্তনকারী প্রাণীকে তাদের ত্বকে আলোক-সংবেদনশীল অপসিন তৈরি করতে দেখা গেছে যদিও কীভাবে তারা রঙ পরিবর্তন করতে সাহায্য করে তা স্পষ্ট নয়। গবেষকরা দেখেন যে হগফিশের চামড়ায় রঙের প্রতিটি বিন্দু হল একটি বিশেষ ধরনের কোশ যাকে ক্রোমাটোফোর বলে যাতে লাল, হলুদ বা কালো রঙের রঞ্জক কণিকা রয়েছে। এই রঞ্জক কণিকাগুলোর নড়াচড়ায় ত্বকের রঙ পরিবর্তিত হয়। রঞ্জক কণিকাগুলো যখন কোশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, তখন রঙটি গাঢ় দেখায় আবার যখন তারা একটি ছোটো জায়গায় এমনভাবে একত্রিত হয় যে সেগুলো আর প্রায় দেখা যায় না তখন কোশটি আরও স্বচ্ছ দেখায়।
এরপরে, গবেষকরা ত্বকের মধ্যে অপসিন প্রোটিন সনাক্ত করতে ইমিউনোলেবেলিং নামে একটি কৌশল ব্যবহার করেছিলেন যার মাধ্যমে তারা দেখেন যে হগফিশে, রঙ পরিবর্তনকারী ক্রোমাটোফোর কোশে অপসিন তৈরি হয় না। পরিবর্তে, ক্রোমাটোফোর কোশের সরাসরি নীচে অন্য কোশে অপসিন থাকে। একটি ট্রান্সমিশন ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে তারা দেখেন এক অজানা কোশে অপসিন প্রোটিন উপস্থিত রয়েছে। ফলত ত্বকে আলো পড়লে তা প্রথমে রঞ্জক-ভরা ক্রোমাটোফোরের মধ্য দিয়ে যাবে তারপর আলো-সংবেদনশীল স্তরে পৌঁছবে। গবেষকদের অনুমান যে হগফিশের ত্বকের অপসিন অণুগুলি নীল আলোর জন্য সবচেয়ে সংবেদনশীল।আর এই তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোই মাছের ক্রোমাটোফোরের রঞ্জক কণাগুলো সবচেয়ে ভালো শোষণ করে। মাছের আলো-সংবেদনশীল অপসিন প্রোটিন অনেকটা অভ্যন্তরীণ পোলারয়েড ফিল্মের মতো কাজ করে, যা আলোকরশ্মির পরিবর্তন ক্রোমাটোফোরের মাধ্যমে ফিল্টার করে আর সেই অনুযায়ী রঞ্জক কণাগুলো গুচ্ছবদ্ধ হয় বা ছড়িয়ে পড়ে। সম্পূর্ণ পদ্ধতিটাই একটা সংবেদনশীল ফিডব্যাক প্রক্রিয়ার মতো কাজ করে যার সাহায্যে হগফিশ তার রঙ পরিবর্তন করার সাথে সাথে তার নিজের ত্বকের নিরীক্ষণ করে এবং সে চোখ দিয়ে যা দেখছে সেই অনুযায়ী তার ত্বকের রঙের সূক্ষাতিসূক্ষ পরিবর্তন করে। এই রঙ-পরিবর্তন করার ক্ষমতা ব্যবহার করে তারা শিকারীদের থেকে নিজেকে আড়াল করে বা নিজের সঙ্গীদেরকে সতর্কও করে।