পৃথিবীর এক বিশালাকার হিমবাহ, নাম থোয়াইটস হিমবাহ। এটি ডুমসডে হিমবাহ নামেও পরিচিত। বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই বলে দিয়েছেন এই হিমবাহ গলে যাচ্ছে। কিন্তু এখন তারা সতর্ক করছেন ডুমসডে হিমবাহটি তাদের অনুমানের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে দ্রুত গতিতে অপ্রত্যাশিতভাবে গলে যাচ্ছে। নতুন গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে হিমবাহের তলদেশে, মাইলের পর মাইল ব্যাপি উষ্ণ সমুদ্রের জল অনুপ্রবেশ করছে।
আন্টার্কটিকায় অবস্থিত এই হিমবাহটি মারফি পর্বতমালা থেকে প্রায় ২৯ কিলোমিটার দূরে । এই হিমবাহের আকৃতি এতটাই বিশাল যে তা আমেরিকার ফ্লোরিডা রাজ্যের সমান। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে ১৯৮০ সাল থেকে হিমবাহটি দ্রুত গলতে শুরু করেছে – শত শত বিলিয়ন টন বরফ গলে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রের স্তর প্রায় ৪% বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদি হিমবাহটি সম্পূর্ণরূপে গলে যায় তবে এটি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ২ ফুট বা ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে।
অন্যদিকে থোয়াইটস হিমবাহটি সমুদ্রের স্তরকেও প্রভাবিত করে কারণ এটি একটি প্রাকৃতিক বাঁধ হিসাবে কাজ করে। এটি পশ্চিম আন্টার্কটিকার আশেপাশের বরফকে সমুদ্রে পিছলে যেতে বাধা দেয়। যদি হিমবাহটি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে, সমুদ্রের উচ্চতা ১০ ফুট পর্যন্ত বাড়তে পারে। নতুন রাডার তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে উষ্ণ এবং উচ্চ-চাপযুক্ত সমুদ্রের জল দুর্বল হিমবাহের গোড়ায় অনুপ্রবেশ করছে। সুতরাং আগে যে ঝুঁকির কথা চিন্তা করা হয়েছিল বাস্তবে তা অনেক বেশি গুরুতর হতে পারে। গবেষকরা বলছেন যে এই প্রবল গলনের গতির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হতে পারে, থোয়াইটস হিমবাহ গলে গেলে পশ্চিম আন্টার্কটিকার জমে থাকা বরফের একটি বড়ো অংশ গলে যাবে। ফলে বিপর্যয়ের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বহু দ্বীপ এবং অনেক উপকূলীয় অঞ্চল ডুবে যেতে পারে। তবে এই বৃদ্ধির মাত্রা পরিমাপ করার জন্য আরো গবেষণা প্রয়োজন। গবেষকরা বলছেন এই মুহূর্তে তাদের কাছে বলার মতো পর্যাপ্ত তথ্য নেই যে সমুদ্রের জলের অনুপ্রবেশ অপরিবর্তনীয় হওয়ার আগে কতটা সময় বাকি আছে। বিষয়টি নিয়ে সারা পৃথিবীর চিন্তাভাবনার সময় এসেছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। সুতরাং বর্তমান গবেষণাগুলো এই সব সংকটপূর্ণ হিমবাহগুলোর উপর কেন্দ্র করে করা উচিত।