আমাদের মস্তিষ্ক ভাবনার ক্ষেত্রভূমি সেটা আমরা জানি। এও জানি যে মস্তিষ্ক আমাদের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গতিবিধি নিয়ন্ত্রন করে। মস্তিস্কের নানা অংশের মধ্যে কাজের দায়িত্বও বেশ সুন্দরভাবে এবং ছন্দে ভাগ করা থাকে। কিন্তু শরীর যখন স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য লড়াই করে, অর্থাৎ বাইরে থেকে কিংবা ভিতরে যখন এমন কিছু ঘটে যা ভালো অবস্থার বিঘ্ন ঘটায় তখন আমাদের ইমিউনিটি বা প্রতিরোধী শক্তি তা আটকানোর চেষ্টা করে। মজার ব্যাপার, সদ্য প্রকাশিত গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে সেটারও ছন্দ ঠিক করে মস্তিষ্কেরই একটা অংশ, নাম তার ব্রেনস্টেম। মস্তিষ্ক যেখানে সুষুম্নাকাণ্ড বা স্পাইনাল কর্ডে এসে মেশে সেখানে একটা বারান্দার মতো অংশ থাকে, তাকেই বলে ব্রেনস্টেম।
‘নেচার’’ পত্রিকার ১লা মে প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায় আমেরিকার বেথেসডার “ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ আলার্জি এন্ড ইনফেকশাস ডিসিস”-এর স্নায়ু অনাক্রম্যতা বিশারদ (নিউরো ইমিউনোলজিস্ট) হাও জিন ও সহকর্মীরা দেখিয়েছেন যে ব্রেনস্টেমের কতগুলো নিউরোন নিয়ন্ত্রন করে রোগ প্রতিরোধের প্রক্রিয়ার ব্যাপকতা এবং তার লক্ষ্যের স্থিরতা। বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের পেটের মধ্যে ব্যাক্টেরিয়ার অংশ প্রবেশ করানোর পর নিরীক্ষণ করেন কিভাবে তারপর ব্রেনস্টেমের নিউরোনের মধ্যে বিক্রিয়া হয়। তারা এও প্রমাণ করেন যে এই নিউরোনগুলির কর্মক্ষমতা বাড়াতে পারলে রক্তে প্রদাহ সংশ্লিষ্ট কেমিক্যালগুলির পরিমাণ কমে যায়। অন্যদিকে এই নিউরোনগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দিলে প্রদাহের মাত্রা তিনশ শতাংশ বেড়ে যায়। এটা প্রমাণ করে যে ব্রেনস্টেমের এই কোষগুলি ইমিউনিটির গতিপ্রকৃতির নিয়ন্ত্রক হিসাবে কাজ করে।
এই গবেষণার গুরুত্ব এটাই যে এই নিউরোনগুলির উপর ওষুধ প্রয়োগ করে ইমিউনিটি বাড়ানোর বা কমানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। নতুন এক পথের সন্ধান পাওয়া গেছে ইমিউন ডিজিজের চিকিৎসার ক্ষেত্রে।