ইউক্যালিপটাস স্নাউট বিটল নামে এক পতঙ্গ ইউক্যালিপটস গাছের মারাত্মক ক্ষতির করে। এই পোকার থেকে ইউক্যালিপটাস বনভূমিকে রক্ষা করার জন্য বিজ্ঞানীরা একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার খুঁজে পেয়েছেন। বায়োলজি কন্ট্রোল জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় গবেষকরা জানিয়েছেন যে তারা এমন এক প্রাকৃতিক রোগসৃষ্টিকারী ছত্রাক সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন যা একটি জৈব-কীটনাশক হিসাবে রূপান্তরিত করে এই পোকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে বিটল নিয়ন্ত্রণের জন্য রোগসৃষ্টিকারী ছত্রাকের শনাক্তকরণ সম্বন্ধে ইতিমধ্যেই জানা গেছে আর এখন, সেটি বিস্তৃত ইউক্যালিপটাসের বাগান রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।
ইউক্যালিপটাস স্নাউট বিটল (গনিপ্টেরাস প্ল্যাটেনসিস) হল এক ধরনের পোকা যারা গাছের পাতা খেয়ে ইউক্যালিপ্টস গাছকে পাতাশূণ্য করে তোলে। যদিও পোকাটি অস্ট্রেলিয়ায় বেশি পাওয়া যায় তবে বিশ্বের অনেক দেশে যেখানে ইউক্যালিপ্টস গাছ জন্মায় সেখানেও দেখতে পাওয়া যায়। বিটল পোকা গাছের পাতা, কুঁড়ি এবং কান্ড খায়, ফলে গাছের বৃদ্ধি নষ্ট হয় এবং ব্যাপক ক্ষতি হয়। পোকাটি ভালো উড়তে পারে আবার বনজ পণ্য পরিবহনের সাথে স্থানান্তরিত হয়, তাই বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ক্ষতির কারণ হতে পারে। পতঙ্গটির একটি ব্যয়বহুল সমাধান রয়েছে। প্রধানত মাইক্রোওয়াস্প বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বোলতা, অ্যানাফেস প্রজাতির সাহায্যে এদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফলে বিজ্ঞানীদের একটি দল সমস্যাটি মোকাবেলা করার জন্য প্রাকৃতিকভাবে রোগসৃষ্টিকারী ছত্রাকের সন্ধান করেন। ছত্রাকের প্রজাতি বিউভেরিয়া এবং মেটারহিজিয়াম থেকে উৎপন্ন মাইকোইনসেকটিসাইডগুলো এই উদ্দেশ্যে সবচেয়ে বেশি উত্পাদিত এবং বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়। গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায় যে B bassiana খুবই কার্যকরী কারণ এর সংস্পর্শে এলে বা খেলে উভয় ক্ষেত্রেই মৃত্যুহার ১০০% হয় যেখানে M anisopliae এবং ব্যাসিলাস প্রজাতির মিশ্রণে মৃত্যুর হার কম- ২.৫ থেকে ৫%।
ইউক্যালিপটাস বনভূমি সারা বিশ্বে ২০ মিলিয়ন হেক্টর জুড়ে বিস্তৃত। গবেষকদের মতে আইবেরিয়ান উপদ্বীপে, ইউক্যালিপটাস স্নাউট বিটল গাছের পাতা খেয়ে ১০০% গাছের ক্ষতি করে এবং কাঠের পরিমাণে ৮৬% পর্যন্ত ক্ষতি করতে পারে। ইউক্যালিপটাস কাঠ কাগজের মণ্ড থেকে উৎপাদনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং ইউক্যালিপটাস স্নাউট বিটলের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে জৈবিক ও রাসায়নিক পদ্ধতির প্রয়োজন।