নেচার জিওসায়েন্সের একটি নতুন সমীক্ষায় আফ্রিকার মারাত্মক বায়ু দূষণ সংকট তুলে ধরে বিশ্বব্যাপী এবং আঞ্চলিক অংশীদারদের জরুরী, সহযোগিতামূলক পদক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তাবিত সমাধানগুলির মধ্যে রয়েছে বায়ুর গুণমান পর্যবেক্ষণ, পরিচ্ছন্ন শক্তি বিনিয়োগ, উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি, এবং দূষণ কমানোর জন্য পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং দুর্বল জনসংখ্যার উপর এর অসম প্রভাব মোকাবিলা করা। এই প্রতিবেদন আফ্রিকায় বায়ু দূষণের স্তরের চ্যালেঞ্জ এবং কেন এটি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের প্রয়োজন তা জানানো হয়েছে। গত ৫০ বছরে আফ্রিকান দেশগুলিতে বায়ুর গুণমান দ্রুত খারাপ হওয়ার জন্য তাদের শহরগুলি বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার ঘনত্বের মাত্রা এখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশের চেয়ে পাঁচ থেকে দশ গুণ বেশি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হওয়ার সাথে সাথে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া রয়েছে। বিপজ্জনক বায়ুর গুণমানকে মোকাবিলা করতে বর্তমানে আফ্রিকাতে বৈশ্বিক বায়ু দূষণ তহবিলের মাত্র ০.০১% ব্যয় করা হচ্ছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানের অধ্যাপক জানিয়েছেন, রান্না করা, বিল্ডিং গরম রাখা এবং আলোর জন্য জৈব জ্বালানী পোড়ানো, অপরিশোধিত তেল, কয়লা শিল্প এবং ইউরোপ থেকে পুরানো যানবাহন পাঠানো আফ্রিকার দেশগুলির নিম্ন মানের বায়ুর জন্য দায়ী। এই বিপজ্জনক বায়ুতে যারা শ্বাস নিচ্ছেন তাদের জটিল বা কখনও মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে৷ তিনি আরও জানিয়েছেন, আফ্রিকার বায়ু দূষণ কেবল মহাদেশে বসবাসকারী মানুষের সমস্যা নয়, বরং বিশ্বব্যাপী বৈশ্বিক জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা পূরণ এবং জলবায়ুর জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করার ক্ষমতা সীমিত করছে। কয়েক বছর ধরে বায়ু দূষণ মোকাবিলায় একাধিক প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে, যেমন আফ্রিকার দশটি বড়ো শহর C40 ক্লিন এয়ার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছে। বায়ু দূষণের মাত্রা নিরীক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগগুলি গতি পেতে শুরু করেছে৷ কিন্তু গবেষকরা জানাচ্ছেন, প্রকৃত পরিবর্তন অর্জনের জন্য আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে সমন্বিত করতে হবে এবং বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং দূষণ কমানোর জন্য বিদ্যমান জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে।
গবেষকরা যে সমস্ত ক্ষেত্রে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন, তা হল সেন্সর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ক্রমাগত বায়ু পর্যবেক্ষণ, সৌর, জলবিদ্যুৎ এবং বায়ুর মতো পরিচ্ছন্ন শক্তিতে বিনিয়োগ, বর্জ্য জমানো ও পোড়ানো রোধ করে পুনর্ব্যবহার এবং পুনরুদ্ধারের হার উন্নত করার জন্য উন্নত কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, উন্নত দেশের ফেলে দেওয়া অপ্রচলিত প্রযুক্তি এড়িয়ে আফ্রিকার দেশগুলি যাতে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ, পরিবহণ খাত থেকে নির্গমন রোধে পরিকাঠামোগত উন্নতি, গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি এবং জ্বালানি ও আমদানিকৃত যানবাহনের জন্য উচ্চ নির্গমন মান স্থির করা।