বিগত দশক-ব্যাপী সমুদ্রের উষ্ণায়নের ফলে মহাসাগরগুলো বেশ কয়েকটা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। উষ্ণায়ন, সমুদ্রের মধ্যে জলের স্রোত সঞ্চালনকে প্রভাবিত করে, অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস পায় যার ফলে জলে লবণের মাত্রা বৃদ্ধি পায় ও পুষ্টি সরবরাহে পরিবর্তন আনে এবং মহাসাগরের অম্লকরণ ঘটে। ১৯৯৮ সালে, বারমুডা আটলান্টিক টাইম-সিরিজ স্টাডি (BATS), বারমুডা দ্বীপের প্রায় ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে একটি জায়গায় শুরু হয়েছিল। সেখানে, বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের পৃষ্ঠ এবং জলের গভীরে সামুদ্রিক পদার্থ, জীব এবং রসায়নের মাসিক নমুনা সংগ্রহ করেন। ফ্রন্টিয়ার্স ইন মেরিন সায়েন্সে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণাপত্রে, গবেষকরা এখন এই পর্যবেক্ষণ থেকে সর্বশেষ ফলাফল উপস্থাপন করেছেন। বারমুডা ইনস্টিটিউট অফ ওশান সায়েন্সেসের গবেষক, নিকোলাস বেটস বলেছেন গবেষণায় দেখা গেছে যে উপ-ক্রান্তীয় উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের উপরিভাগ গত ৪০ বছরে প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণ হয়েছে। তাছাড়াও, সমুদ্রের লবণাক্তভাব বেড়েছে, এবং অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে। সমুদ্রের অম্লতা ১৯৮০ থেকে ২০২০-র মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে৷
BATS মনিটরিং স্টেশনে দেখা গেছে, ১৯৮০-র দশক থেকে প্রতি দশকে সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ০.২৪°C বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়াও ৪০ বছর আগের তুলনায় সাগর এখন প্রায় ১°C বেশি উষ্ণ। গত চার বছরে, সমুদ্রের তাপমাত্রাও আগের দশকের তুলনায় আরও তীব্রভাবে বেড়েছে। নিরীক্ষণ করে দেখা গেছে যে সমুদ্রের জল কেবল উষ্ণই নয়, পৃষ্ঠের জল আরও লবণাক্ত হয়েছে, যার অর্থ জলে আরও লবণ দ্রবীভূত হয়েছে। পৃষ্ঠের তাপমাত্রার মতো, এই লবণাক্তভাব গত কয়েক বছরে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেটস বলেছেন এই পরিবর্তন বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং বিশ্বব্যাপী উষ্ণতম বছরের কারণে ঘটছে।
একই সাথে তথ্য থেকে জানা গেছে যে বিগত ৪০ বছরে জলজ প্রাণীর জন্য জলে অক্সিজেনের পরিমাণ ৬% কমেছে। অম্লতার মানও পরিবর্তিত হয়েছে, ১৯৮০ সালের তুলনায় সমুদ্র এখন ৩০% বেশি অম্লীয়, যার ফলে কার্বন আয়নের ঘনত্ব কম। এর কারণে খোলসযুক্ত জীবের খোলস টিকিয়ে রাখার ক্ষমতায় প্রভাব পরেছে।
বেটস ব্যাখ্যা করেছেন যে এই পরিবর্তনগুলো বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণের কারণে ঘটেছে। অনেকটা সময় জুড়ে তথ্য সংগ্রহ করা অবস্থার আসন্ন পরিবর্তনের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্যবেক্ষণের ফলে সমুদ্রের উষ্ণায়ন এবং সাম্প্রতিককালে মহাসাগরের রসায়নের পরিবর্তনের হারের একটি ধারনা পাওয়া যায় এবং পরবর্তী দশকে ভবিষ্যতের পরিবর্তনের ইঙ্গিতও পাওয়া যায়। বেটসের মতানুসারে এই তথ্য আঞ্চলিক এবং বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত পরিবর্তনের প্রমাণ এবং অদূর ভবিষ্যতে ব্যক্তি এবং সমাজ হিসাবে আমরা যে অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হব তারও ইঙ্গিত প্রদান করে।