লাল পিঁপড়ে বা রেড ফায়ার অ্যান্ট দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আজ সিসিলিতে পৌঁছে গেছে। ইউরোপে সর্ব প্রথম এই আক্রমণাত্মক প্রজাতিকে দেখা গেছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে যদি এই ক্ষতিকারক কীট ঝাঁকে ঝাঁকে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে থাকে তবে একদিন এরা পুরো মহাদেশই দাবি করতে পারে। সোলেনোপসিস ইনভিক্টা নামের এই পিঁপড়ে, আজ, বিশ্বের পঞ্চম ব্যয়বহুল আক্রমণাত্মক প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত। এদের কারণে পরিবেশের যা ক্ষতি হয় তা রুখতে বহু দেশে বিলিয়ন ডলার অর্থ ব্যয় হয়। এদের নামকরণ আক্ষরিক অর্থে উপযুক্ত কারণ এরা একটি বিষাক্ত হুল ফুটিয়ে দেয়। যেহেতু এই কীট দলে বিচরণ করে তাই তারা সহজেই নিজেদের থেকে বহুগুণ বড়ো শিকারকে আক্রমণ করতে পারে। পিঁপড়ের কলোনি ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে তারা গাছপালা এবং প্রাণীকে এরা গ্রাস করে, মূল্যবান বন্যপ্রাণীর জমি আক্রমণ করে। অস্ট্রেলিয়ায় এই আক্রমণাত্মক প্রজাতির পিঁপড়েরা বন্য বিড়াল, বন্য কুকুর, শেয়াল, উট, খরগোশ প্রভৃতির দ্বারা পরিবেশগত যে ক্ষতি হয়েছে তা ছাড়িয়ে গেছে। ফায়ার অ্যান্ট আক্রমণাত্মক আগাছার মতো, খুব সহজেই মানুষের বসত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে আর মানুষের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরিবেশের ক্ষতি করে চলেছে। এরা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে, প্রজাতিটি মেক্সিকো, দক্ষিণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, তাইওয়ান, অস্ট্রেলিয়া, ক্যারিবিয়ান, জাপান এবং ফিলিপাইনে ছড়িয়ে গেছে। অতীতে এই প্রজাতি বেশিরভাগই দক্ষিণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে বাণিজ্যের বিশ্বায়নের সাথে মাটি ও ঘাস, চাড়া গাছ, খড় বা মৌচাকের মতো জিনিসের মাধ্যমে সারা বিশ্বে এদের ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা আগের চেয়ে অনেক বেশি। যদি এই পিঁপড়েরা সফলভাবে কোনো বন্দরে পৌঁছে যায় তবে তারা স্বল্প সময়ের মধ্যে বহু দূর ছড়িয়ে পড়তে পারে, বাতাসের স্রোতে উড়তে পারে বা নদী বা বন্যার জলে ভেসে চলতে পারে। গবেষকরা সিসিলিতে একটি নদীর কাছে অপেক্ষাকৃত একটি ছোটো জমিতে ৮৮টি বাসা খুঁজে পেয়েছেন এবং এই কলোনিতে ইতিমধ্যে হাজার হাজার শ্রমিক পিঁপড়ে রয়েছে। এরা কীভাবে এই স্থানে পৌঁছেছে তা গবেষকদের কাছে স্পষ্ট নয়, তবে গত কয়েক বছরে কোনও বড়ো ল্যান্ডস্কেপিং বা রোপণ প্রকল্প হয়নি আর তাদের এই স্থানটি প্রথম আগমন ক্ষেত্র নয় বলেই বিজ্ঞানীরা মনে করেন।