আক্কেল দাঁত হল মুখের একেবারে পিছনে অবস্থিত মোলারের তৃতীয় সেট। দেখতে প্রথম এবং দ্বিতীয় মোলারের মতো হলেও এরা আকারে কখনও কখনও একটু ছোটো হতে পারে। এই দাঁতকে সাধারণত আক্কেল দাঁত বলা হয় কারণ এগুলো ৩২টি স্থায়ী দাঁতের মধ্যে সর্বশেষে অর্থাৎ ১৭ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে গজায়। ইংরাজিতে একে বলে উইজডম টুথ অর্থাৎ যখন আমাদের বয়স হবে এবং আমরা জ্ঞানী হয়ে উঠবো তখন এই দাঁত গজাবে। আমরা হয়তো জানি যে প্রত্যেকের চারটি আক্কেল দাঁত গজায় না। অনেককে আবার মাড়ি কেটে আক্কেল দাঁত বের করতে হয়। তাই অনেক সময় মনে প্রশ্ন জাগে যে কেন মানুষের এই দাঁত গজায়? গবেষকদের মতে এর সম্পর্ক সুদূর অতীতের সাথে রয়েছে আবার বর্তমানের সঙ্গেও রয়েছে। মানুষের মতোই প্রাইমেট বর্গের অন্তর্গত প্রাণী যেমন বানর, গোরিলা এবং শিম্পাঞ্জি সবারই আক্কেল দাঁত আছে। কয়েক মিলিয়ন বছর আগে, মানুষের আদিম পূর্বপুরুষদের আজকের মানুষের চেয়ে আকারে বড়ো চোয়াল এবং দাঁত ছিল। তাদের মোটা এনামেল সহ তিনটি বড়ো মোলার দাঁত ছিল যার সাহায্যে তারা চিবোতে পারত। বিজ্ঞানীরা মনে করেন আদিম মানুষের মজবুত চোয়াল এবং দাঁতের প্রয়োজন ছিল কারণ তারা কাঁচা মাংস এবং গাছপালা খেত তাদের অনেক বেশি খাবারগুলো চিবোতে হত, আজকের খাবারের তুলনায় সে সব খাবার চিবানো অনেক বেশি কঠিন ছিল। কৃষিকাজ, রান্নাবান্না এবং খাদ্য সঞ্চয় সহ বিভিন্ন কারণের জন্য আজকের খাদ্য অতীতের তুলনায় অনেক নরম। নরম খাবার মানে তা সহজে চিবানো যায় এবং দাঁতের পক্ষে সে কাজ কম চ্যালেঞ্জিং। ফলস্বরূপ, আধুনিক মানুষের চোয়াল আমাদের বিলুপ্ত পূর্বপুরুষদের তুলনায় ছোটো এবং মুখমণ্ডল চ্যাপ্টা আকারে বিবর্তিত হয়েছে, কারণ আমাদের খাবারের জন্য তাদের মতো বড়ো, তীক্ষ্ণ দাঁতের প্রয়োজন হয় না। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে খুব ধীরে ধীরে ঘটে যাওয়া এই পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে, তৃতীয় মোলার – আক্কেল দাঁত – বর্তমানে সম্ভবত এতো গুরুত্বপূর্ণ নয়।
আজ প্রায় ২৫% ব্যক্তির একটি আক্কেল দাঁত সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত অর্থাৎ এটি কখনই তাদের গজায় না। বিজ্ঞানীরা এর কারণ সম্বন্ধে নিশ্চিত নন, হয়তো বা এটি তারা তাদের পিতামাতার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে। কিছু বিজ্ঞানী যুক্তি দিয়েছেন যে ছোটো চোয়ালের মানুষের জন্য আক্কেল দাঁত না গজানো সুবিধাজনক কারণ ছোটো চোয়ালের মধ্যে বেশি দাঁত থাকলে অসুবিধা হতে পারে। তাই কখনও কখনও, স্থানের অভাবে, আক্কেল দাঁতগুলো চোয়ালের হাড়ের ভিতরে আটকে যেতে পারে এবং কখনই পুরোপুরি উঠে আসে না – অথবা তারা কেবল আংশিকভাবে বের হয় এবং এই ঘটনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উপরের চোয়ালের চেয়ে নীচের চোয়ালে বেশি ঘটে। সেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তিদের কখনও কখনও ব্যথা, দাঁতের ক্ষয় বা মাড়ির প্রদাহ অনুভব করতে হতে পারে এবং তা সরিয়ে ফেলতে হয়। তবে সাধারণত আক্কেল দাঁত অপসারণের প্রয়োজন হয় না যদি সেগুলো মাড়ি থেকে সম্পূর্ণরূপে গজায়, সঠিকভাবে অবস্থান করে এবং ঠিক থাকে। দাঁতের যত্ন নেওয়ার অন্যতম পন্থা হল দাঁত মাজা। দাঁত ভালো রাখতে দাঁত মাজার কোনও বিকল্প নেই।