শীত পরার সাথে সাথে শুরু হয়ে গেছে অ্যালার্জির মরসুম। হাঁচি, চুলকানি, বা জলে ভরা চোখ, ফোলা ফোলা ভাব- এই উপসর্গ নিয়ে শুধু আপনি একা ভুগছেন তা নয়- লক্ষ লক্ষ মানুষ মরসুমি অ্যালার্জিতে ভোগেন। আপনি হয়তো উপসর্গ উপশম করতে এক বা একাধিক অ্যালার্জির ওষুধ বা ন্যাসাল স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন, তবে আপনি যা খাচ্ছেন তা আপনার মরসুমি অ্যালার্জির লক্ষণের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। মরসুমি অ্যালার্জি থেকে রেহাই পেতে আপনার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন বেশ কিছু খাবার যেমন কমলালেবু, আপেল, আনারস, লঙ্কা, হলুদ প্রভৃতি।
কমলালেবু বায়োফ্ল্যাভোনয়েড সমৃদ্ধ, যা অ্যালার্জি এবং অন্যান্য পরিবেশগত কারণে সৃষ্ট প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। কমলালেবু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। ভিটামিন সি হিস্টামিনের নিঃসরণকে ব্লক করতে সাহায্য করে আর এই হিস্টামিন অ্যালার্জির উপসর্গের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এই রাসায়নিকের কারণে চোখ দিয়ে জল পড়ে, গলা খসখস করে, সর্দি এবং হাঁচি হয়। কমলালেবুতে উপস্থিত বায়োফ্ল্যাভোনয়েড এবং ভিটামিন সি-এর সংমিশ্রণ এই সুস্বাদু টক ফলকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে। আপেলে উপস্থিত কুয়ারসেটিন একটি বায়োফ্ল্যাভোনয়েড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা প্রাকৃতিক অ্যান্টিহিস্টামিন হিসেবে কাজ করে। আপেলের পাশাপাশি, চা, বেরি এবং লাল পেঁয়াজের মতো খাদ্যেও প্রচুর পরিমাণে কুয়ারসেটিন রয়েছে, এবং এই সবগুলোই মরসুমি অ্যালার্জির উপসর্গের ক্ষেত্রে উপকারী। কুয়ারসেটিন একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিহিস্টামিন হিসাবে কাজ করে, তাই যদি হালকা অ্যালার্জির লক্ষণ অনুভব করেন, যেমন সর্দি, হাঁচি এবং চোখ চুলকানো তবে এই খাবারগুলো তা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করতে পারে৷ গ্রীষ্মকালের ফল আনারসে ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এনজাইম ব্রোমেলেন রয়েছে। প্রাকৃতিক চিকিত্সকরা দীর্ঘকাল ধরে ব্রোমেলেনকে মরসুমি অ্যালার্জির বিরুদ্ধে বা বিভিন্ন স্বাস্থ্য অবস্থার বিকল্প থেরাপি হিসাবে ব্যবহার করেছেন। ব্রোমেলেন শরীরের প্রদাহ সৃষ্টিকারী প্রোটিনকে ভেঙে দেয়। এই প্রক্রিয়াটি সাইনাসের ঝিল্লিতে ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে, কারণ এই ফোলাভাবের জন্য নাক বন্ধ হওয়ার অনুভূতি হয়। এছাড়াও, আনারস ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এবং হিস্টামিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ঝাল লঙ্কা হল একটি প্রাকৃতিক ডিকনজেস্ট্যান্ট যা নাক এবং সাইনাস পরিষ্কার করতে সাহায্য করে, সেইসাথে বন্ধ নাকের উপশম ঘটায়। এছাড়াও, এটি পাতলা শ্লেষ্মা নিঃসরণে সাহায্য করে, আর তাই মরসুমি অ্যালার্জির লক্ষণের মাত্রা কম করে। এসব ছাড়াও মরসুমি অ্যালার্জি কমাতে সাহায্য করে হলুদ। হলুদ এমন একটি মসলা যা সাধারণত ভারতীয় এবং থাই রান্নায় ব্যবহৃত হয়, এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আমাদের খাদ্যতালিকায় হলুদ যোগ করা প্রাকৃতিকভাবে মরসুমি অ্যালার্জির বিরুদ্ধে লড়াই করার একটি সহজ উপায়। হলুদের সক্রিয় উপাদান, যার নাম কারকিউমিন, হিস্টামিনের নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করে। অ্যালার্জির সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বেশ কিছু উপায় রয়েছে, যেমন-
প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ আউন্স জল পান করা কারণ অ্যান্টিহিস্টামিন যা অ্যালার্জি প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয় আমাদের মুখ এবং অনুনাসিক প্যাসেজ শুকিয়ে দেয়। ত্বক পরিষ্কার রাখতে নিয়মিত স্নান করা, বাইরে ব্যবহৃত পোশাক পরিবর্তন করা বা বিছানার চাদর নিয়মিত পাল্টানো। তাই ডাক্তারদের অভিমত সঠিক পুষ্টিই হল এই মরসুমে আমাদের অ্যালার্জির লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করার এবং সুস্থ থাকার একটি দিক।