জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে আর এই কারণেই অ্যান্টার্কটিকার বেলিংশউসেন সাগরের পাঁচটি এম্পারার পেঙ্গুইন কলোনির মধ্যে চারটি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রজনন ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়েছে। কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এর থেকে এটা স্পষ্ট যে সাম্প্রতিক বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই অঞ্চলে সমুদ্রের বরফের যে ক্ষতি হচ্ছে সেই কারণে প্রজনন ব্যর্থতা ঘটছে।
এম্পারার পেঙ্গুইন (অ্যাপ্টেনোডাইটস ফরস্টেরি) প্রজনন এবং খোলস ত্যাগ করার সময় হল এপ্রিল থেকে জানুয়ারি মাস, আর এই সময় ওদের আবাস্থলে স্থিতিশীল বরফ প্রয়োজন। অ্যান্টার্কটিকার সামুদ্রিক বরফের পরিমাণে সামান্য পরিবর্তন তাদের প্রজননকে প্রভাবিত করতে পারে কারণ পেঙ্গুইনের ছানাদের জলে সাঁতার কাটার জন্য পালক তৈরি হওয়ার সময় দেওয়া প্রয়োজন। পিটার ফ্রেটওয়েল এবং সহকর্মীরা অ্যান্টার্কটিকার বেলিংশউসেন সাগরের পাঁচটি কলোনির প্রজনন ঋতুতে এম্পারার পেঙ্গুইনের উপস্থিতি নিরীক্ষণ করতে ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যবর্তী সময়কালের স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করেছেন।
অ্যান্টার্কটিকার এম্পারার পেঙ্গুইনের ছানা শীতের সবচেয়ে ঠান্ডা দিনে ডিমের খোলস থেকে বেরিয়ে আসে। জীবনের প্রথম মাসগুলোতে এই সব ছানারা প্রতিরক্ষাহীন ধূসর ফোলা তুলোর বলের মতো তাদের মা-বাবার পায়ের কাছে বা তাদের কলোনির কেন্দ্রে উষ্ণতার খোঁজে থাকে। পেঙ্গুইনের মসৃণ সাদা-কালো পালক তাদের ত্বককে হিমায়িত সমুদ্রের জল থেকে রক্ষা করে। কিন্তু তাদের সদ্যজাত ছানাদের সারা শরীরের ছোটো ছোটো পালক জল প্রতিরোধ করতে পারে না। তাদের জন্মানোর ৪ মাস পরে শরীরে এই জল প্রতিরোধী সাঁতার কাটার পালক গজিয়ে ওঠে। এই সময়ের আগে অবধি তাদের বরফের উপরে থাকতে হয় ও সমুদ্র থেকে দূরে থাকতে হয়। ডিসেম্বর মাস থেকে অ্যান্টার্কটিকায় গরমের সূচনা, যখন সমুদ্রের বরফ ভেঙে গলে যায় এবং কলোনির নতুন সদস্যরা নিরাপদে প্রাপ্তবয়স্ক পেঙ্গুইনদের অনুসরণ করে সমুদ্রের জলে সাঁতার কাটতে পারে। এম্পারার পেঙ্গুইনের প্রতিটি নতুন প্রজন্মের বেঁচে থাকা নির্ভর করে তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পায়ের নীচে বরফের উপস্থিতির উপর। জীববিজ্ঞানীরা তাই আশঙ্কা করেছেন, গত বছরে অ্যান্টার্কটিকার শীতকালীন সামুদ্রিক বরফের অসময়ে গলে যাওয়া পেঙ্গুইনের এই প্রজাতির প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, ডেকে এনেছে বিপর্যয় ।