বরফ, তুষারের রাজ্যে আমাদের চোখ চারদিকে শুধু সাদা রং দেখতে অভ্যস্ত, সেখানে বরফের হিমবাহ থেকে রক্তের মতো লাল রঙ ঝরে পড়েছে তুষারে ঢাকা আর একটা হ্রদে! ১৯১১ সালে একদল বৃটিশ যাত্রী অ্যান্টাকর্টিকা অভিযানে গিয়ে এই দৃশ্য প্রথম দেখেছিলেন।
ব্রিটিশ বিজ্ঞানী টমাস গ্রিফিথ টেলরের নামে এই হিমবাহের নামকরণ করা হয়েছিল, যিনি ১৯১০ থেকে ১৯১৩ সালের অভিযানে প্রথম ব্লাড ফলস লক্ষ্য করেছিলেন। একশো বছরের বেশি সময় লেগে গেল হিমবাহের মুখ থেকে এই ব্লাড ফলস বা ভয়ঙ্কর রক্তপাতের পিছনে কী কারণ আছে তা জানতে।
মার্কিন বিজ্ঞানীদের একটা দল নভেম্বর ২০০৬ এবং নভেম্বর ২০১৮ – এর মাঝামাঝি এবং শেষের দিকে টেলর গ্লেসিয়ারের মরচেওয়ালা জিভ থেকে নমুনা নিয়ে শক্তিশালী ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে তা বিশ্লেষণ করে লাল রঙের কারণ আবিষ্কার করেছেন। এই গবেষণা অ্যাস্ট্রোনমি ও স্পেস সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির মেটিরিয়াল বিজ্ঞানী কেন লিভি জানিয়েছেন ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপের নীচে ফেলতেই তিনি লক্ষ করেন আয়রন সমৃদ্ধ ছোটো ছোটো ন্যানোস্ফিয়ার। এই অতি ক্ষুদ্র কণাগুলো প্রাচীন জীবাণু থেকে এসেছে, যা আকারে মানুষের লোহিত রক্তকণিকার একশো ভাগের একভাগ। এই কণা টেলর হিমবাহের গলিত জলে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে।
লোহার পাশাপাশি, ন্যানোস্ফিয়ারগুলোতে সিলিকন, ক্যালসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম এবং সোডিয়ামও রয়েছে এবং হিমবাহের জিহ্বা থেকে পিছলে যখন দীর্ঘ সময়ের মধ্যে প্রথমবার তা অক্সিজেন, সূর্যালোক এবং উষ্ণতার জগতের সাথে মিলিত হচ্ছে, তখন তা সাথে সাথে উপহিমবাহের জলকে লাল করে তোলে।
লিভির ব্যাখ্যা অনু্যায়ী, একটা খনিজ পদার্থে পরিণত হওয়ার জন্য, পরমাণুগুলোকে একটি নির্দিষ্ট স্ফটিকের মতো কাঠামোতে সজ্জিত হতে হয়, কিন্তু এই ন্যানোস্ফিয়ারগুলি স্ফটিকাকৃতি নয়, তাই কঠিন পদার্থ পরীক্ষা করার জন্য আগে ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলো এদের সনাক্ত করতে পারেনি।
এই হিমবাহের নীচে যে সমস্ত অণুজীবী বাস করে তারা লক্ষ লক্ষ বছরের পুরোনো, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই নমুনা পরীক্ষা করে অন্য গ্রহে লুকোনো প্রাণের অস্তিত্ব বোঝার ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারবেন। কিন্তু এই নতুন গবেষণা থেকে বোঝা যাচ্ছে যদি মার্স রোভারের মতো রোবটগুলোর বোর্ডে সঠিক সরঞ্জাম না থাকে, তবে তা একটা গ্রহের বরফের নীচে উপস্থিত অন্য জীবন সনাক্ত করতে সক্ষম হবে না। লিভি জানিয়েছেন হয়তো এই কারণে মঙ্গল গ্রহে এখনও প্রাণের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না, কারণ মার্স রোভারে তেমন সরঞ্জাম নেই যা এই ধরনের অণুজীবীর ন্যানোস্ফিয়ার সনাক্ত করতে সক্ষম।