স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি সুস্থ থাকতে কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুমও অত্যন্ত জরুরি। অনিদ্রা একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে অন্যতম। অনিদ্রা ডেকে আনে হৃদ্রোগ, স্নায়ুর দুর্বলতা, ওবেসিটি বা মোটা হয়ে যাওয়ার মতো হাজার রকম শারীরিক সমস্যা। এক জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সারা দিনে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টার ঘুম প্রয়োজন। ঠিক মতো না ঘুম হলে শুধু শরীরে নয়, প্রভাব পড়ে মনেও। অল্প কয়েকদিন কম ঘুমের কারণে বিভিন্ন ধরনের চোখের সমস্যা যেমন চোখে শুষ্কতা বা চোখ চুলকানো প্রভৃতি দেখা যায় কিন্তু সমস্যা যখন দীর্ঘমেয়াদী তখন অনিদ্রার কারণে চোখে রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
কর্নিয়া হল চোখের সামনের স্বচ্ছ স্তর যা আইরিস, পিউপিল বা তারারন্ধ্র এবং চোখের সম্মুখ প্রকোষ্ঠকে আবৃত করে রাখে। প্রযুক্তিগতভাবে বলতে গেলে, কর্নিয়া একটি একক স্তর নয়; এটি পাঁচটি সূক্ষ্ম ঝিল্লি দিয়ে তৈরি যা পরপর সাজানো থাকে। কর্নিয়ার স্বচ্ছতা এবং এর বক্র আকৃতি কোনো বস্তু থেকে আলোকে এমনভাবে প্রতিসরণ করতে সাহায্য করে যে এটি রেটিনার নির্দিষ্ট স্থানে পড়ে যার ফলে দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ণ হয়। এছাড়াও, কর্নিয়া একটি প্রতিরক্ষামূলক স্তর হিসাবে কাজ করে যা সমস্ত ধুলো, ময়লা এবং জীবাণুকে আমাদের চোখের ভিতরে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। কর্নিয়া চোখের স্বাস্থ্য এবং কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। ল্যাসিক এবং অন্যান্য অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কর্নিয়াকে নতুন আকার দেওয়া যায়। কর্নিয়ার রক্ষণাবেক্ষণ করে স্টেম সেল, আর এই স্টেম সেল মৃত কোশ প্রতিস্থাপন করতে এবং ছোটোখাটো আঘাত মেরামত করতে বিভাজিত হয়। কর্নিয়ার স্টেম সেলের ক্রিয়াকলাপ এমনভাবে ছন্দবদ্ধ থাকে যে এর অন্যথা ঘটলে চোখের রোগ হতে পারে হারাতে হতে পারে দৃষ্টিশক্তি। স্টেম সেল রিপোর্টে, চিনের জিয়ামেন ইউনিভার্সিটি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষকরা দেখার চেষ্টা করেছেন কীভাবে অনিদ্রার কারণে কর্নিয়ার স্টেম কোশ প্রভাবিত হয়। ইঁদুরের মধ্যে পরীক্ষায় দেখা গেছে স্বল্প সময়ের জন্য কম ঘুমের কারণে কর্নিয়ায় স্টেম কোশের সংখ্যা বৃদ্ধির হার বেড়ে যায়। একই সাথে প্রতিরক্ষামূলক টিয়ার ফিল্মের গঠনকে পরিবর্তন করে, এবং টিয়ার ফিল্ম অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোকে হ্রাস করে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব কর্নিয়াল স্টেম সেল কার্যকলাপের উপর পরে, এবং, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত চোখের ড্রপ অত্যধিক স্টেম সেল কার্যকলাপকে রোধ করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের অভাব কর্নিয়ার স্বাস্থ্যের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলে, কর্নিয়া পাতলা হয়ে যায় এবং তার স্বচ্ছতা হারায় এবং কর্নিয়াতে স্টেম সেলের সংখ্যা কমে গিয়ে কর্নিয়ার ক্ষতি হয় বা দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে যায়। ইঁদুরের গবেষণায় এটা প্রমাণিত হলেও মানুষের ক্ষেত্রেও যে একই প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।