ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক শরীরকে আক্রমণকারী রোগজীবাণু থেকে বাঁচায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। কিন্তু অটোইমিউন রোগের ক্ষেত্রে শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই শরীরের শত্রু হয়ে ওঠে। বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখেন কীভাবে এই স্ব-ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়াকে দমন করা যায়। নেচার বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ গবেষকরা রিপোর্ট করেন যে এই “ইনভার্স ভ্যাকসিন”, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (এমএস) এবং লুপাসের মতো অটোইমিউন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষেত্রে নতুন উপায় দেখাতে পারে। ইমিউন সিস্টেম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু বা কণার প্রতি সাড়া দেয় যা অ্যান্টিজেন হিসেবে পরিচিত। বেশিরভাগ সময় এই অ্যান্টিজেন ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার মতো বিপজ্জনক আক্রমণকারীদের থেকে শরীরে প্রবেশ করে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এই ইমিউন কোশ সেলফ অ্যান্টিজেন বা শরীরের নিজস্ব কোশের অণুর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং অটোইমিউন রোগে, এই বিপথগামী ইমিউন কোশগুলো রোগীর নিজস্ব কলার বিরুদ্ধে কাজ শুরু করে।
৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, গবেষকরা শরীরের অ্যান্টিজেনের প্রতি শরীরের সহনশীলতা পুনরুদ্ধার করার এই অভ্যন্তরীণ লড়াই বন্ধ করার চেষ্টা করছেন। তারা কিছু প্রাণীতে পরীক্ষা করে সফলতা পেয়েছেন। এক্সপেরিমেন্টাল অটোইমিউন এনসেফালোমাইলাইটিস (EAE) রোগের ক্ষেত্রে ইঁদুরের ইমিউন সিস্টেম তাদেরই স্নায়ুর চারপাশের মাইলিন শিথ আক্রমণ করে। ইঁদুরের মধ্যে মাইলিন প্রোটিনের কণার অনুপ্রবেশ ঘটালে তাদের ইমিউন সিস্টেম স্নায়ুর মাইলিনকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু থেরাপি হিসেবে অনুমোদনের ক্ষেত্রে এই কৌশল মানুষের মধ্যে যথেষ্ট ভালো কাজ করতে সক্ষম নয়। ইমিউনোইঞ্জিনিয়ার জেফরি হাবেল, ইমিউনোলজিস্ট অ্যান্ড্রু ট্রেমেইন এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার রাচেল ওয়ালেসের নেতৃত্বে গবেষকের একটি দল এক নতুন পদ্ধতির অন্বেষণ করছে: লিভার নিশানা করে সেলফ অ্যান্টিজেন পরিচালনা। লিভার সহনশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সেখানে ইমিউন কোশ সেলফ-অ্যান্টিজেন গ্রহণ করে টি-কোশগুলো দমিয়ে দেয় যা এই অণুকে নিশাণা করে। গবেষকরা শর্করার চেইনের মাধ্যমে অ্যান্টিজেনকে লিভারে সংযুক্ত করার উপায় নিয়ে এসেছিলেন। গবেষকরা যখন ইঁদুরের মধ্যে ডিমের সাদা প্রোটিন ঢুকিয়ে দেন, তখন একটি শক্তিশালী ইমিউন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তারা দেখার চেষ্টা করেন প্রতিক্রিয়াটিকে রোধ করা যায় কিনা। তাই প্রথমে তারা ইঁদুরকে প্রোটিন ইনজেকশন দেয় এবং তারপরে শর্করা চেইনের সাথে সংযুক্ত অ্যান্টিজেনের তিনটি ডোজ দেয়। পরে বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের লিম্ফ নোড এবং প্লীহা পর্যবেক্ষণ করেন এবং দেখেন যে ‘ইনভার্স ভ্যাকসিন’ প্রোটিনকে নিশানা করা টি-কোশকে কাজ করতে দেয় না। ওয়ালেসের মতে এই পরিবর্তন প্রতিরোধ ক্ষমতার ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করতে একসাথে কাজ করে। কিন্তু ডিমের প্রোটিনের প্রতি অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া একটি অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া নয় তাই গবেষকরা দেখার চেষ্টা করেন যে EAE-র ক্ষেত্রে ইঁদুরে কী প্রতিক্রিয়া হয়। তারা দেখেন যে মাইলিন প্রোটিন সংযুক্ত শর্করা চেইনের সমন্বয়ে গঠিত ইনভার্স ভ্যাকসিন ইঁদুরকে রোগটি থেকে প্রতিরোধ করে। হাবেলের মতে বর্তমানে অটোইমিউন চিকিত্সা পদ্ধতি রোগীর সংক্রমণ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে সেদিক থেকে এই ‘ইনভার্স ভ্যাকসিন’ একটি প্রতিশ্রুতিশীল বিকল্প হতে পারে। তবে এই পদ্ধতি মানুষের ক্ষেত্রে কতটা কার্যকরী হবে তা সময় বলবে।