সাভানার স্তন্যপায়ী প্রাণীরা সিংহের গর্জনের চেয়ে মানুষের কণ্ঠস্বরকে বেশি ভয় পায়। বিজ্ঞানীরা লুকানো স্পিকার থেকে মানুষ, সিংহ এবং পাখির আওয়াজ বাজিয়ে এটি আবিষ্কার করেছেন। তারা দেখেছেন, সমস্ত প্রাণীর রাজা হিসাবে বিবেচিত সিংহের তুলনায় পশুদের কাছে আরও ভয়াবহ হল মানুষ।
কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার স্তন্যপায়ী প্রাণীরা যখন সিংহের গর্জন শোনে আর মানুষের কণ্ঠস্বর শোনে তখন দেখা যায় মানুষের আওয়াজে তাদের জল পানের গর্ত ছেড়ে পালানোর সম্ভাবনা দ্বিগুণ। ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী লিয়ানা জ্যানেট যিনি গবেষণার নেতৃত্ব দেন, তিনি বলেছেন মানুষ হল সাভানার “সুপার শিকারী”। গবেষকরা সাভানার ইকোসিস্টেম জুড়ে পশুদের বিভিন্ন জলপানের স্থানে ছদ্মবেশী ক্যামেরা এবং স্পিকার লাগিয়েছিলেন। তারপরে তারা মানুষ, সিংহ, কুকুর, বন্দুকের গুলি বা পাখির শব্দ বাজিয়ে প্রাণীদের প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করেছিলেন। ৪০০০ বারেরও বেশি সময় এই ট্রায়াল চালিয়ে, জ্যানেট এবং তার সহকর্মীরা দেখতে পান যে বিপদের সংকেত হতে পারে এমন অন্যান্য শব্দের তুলনায় মানুষের প্রতি প্রাণীদের প্রতিক্রিয়ার হার অনেক বেশি ছিল। জ্যানেট ব্যাখ্যা করেছেন, কখন শিকারীর থেকে পালাতে হবে তা জানার জন্য ভয় প্রাণীদের কাছে সহায়ক জীবন কৌশল। কিন্তু , প্রাণী যখন কাছাকাছি থাকা শিকারীকে ভয় পায় তখন তারা কম খায়, বেশি দৌড়ায় এবং প্রজনন করতে বেশি সমস্যায় পড়ে। ভয় তাই প্রাণীর সামগ্রিক জনসংখ্যা হ্রাস করতে পারে।
পুরোনো নানা অধ্যয়ন শীর্ষ শিকারী হিসেবে সিংহকে বিবেচনা করত। কিন্তু, বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছিলেন যে তাদের মানুষকেও এই হিসেবের আওতায় আনা দরকার, কারণ তারা বিশ্বব্যাপী শিকারীদের তুলনায় অনেক বেশি হারে পশু পাখি শিকার করে। এই সমীক্ষা মানুষের জন্য হতাশাজনক হলেও, এটি শিকার প্রতিরোধের নতুন উপায় উদ্ভাবনে কার্যকর করা যেতে পারে। উচ্চহারে পশু পাচারের জন্য পরিচিত এলাকায় মানুষের কণ্ঠস্বর বাজিয়ে, প্রাণীদের দূরে রাখা সম্ভব হতে পারে ফলে পশুরা শিকারীদের হাত থেকে বাঁচতে পারে।