‘অ্যাটপিক ডার্মাইটিস’ বা চামড়ার অসুখ একজিমা খুবই পরিচিত একটি নাম। ত্বক শুষ্ক হয়ে ফেটে যাওয়া, চুলকানি, খসখসে হয়ে যাওয়া, ফোস্কা পড়া একজিমার অন্যতম লক্ষণ। শিল্পোন্নত দেশগুলোয় প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন শিশু এই দীর্ঘস্থায়ী চর্মরোগে আক্রান্ত। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে একজিমার হার শিল্পোন্নত দেশগুলোর তুলনায় ত্রিশগুণ কম। শিল্প বিপ্লব শুরু হয়েছিল ১৭৬০ সালে তবে সে সময় একজিমার হার বাড়েনি। পরিবর্তে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড এবং অন্যান্য দেশে একজিমা ১৯৭০ সালে দ্রুত বাড়তে শুরু করে। এই সমস্যার নির্দিষ্ট কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে অনেক চিকিৎসক মনে করেন জিনগত এবং পরিবেশগত কারণের সমন্বয়েই একজিমা হয়। বাবা কিংবা মায়ের কারও এই সমস্যা থাকলে, সন্তানেরও রোগ হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। তাছাড়াও, সাবান, শ্যাম্পু, ডিটারজেন্ট, ডিজ়ইনফেকট্যান্ট থেকে অ্যালার্জি হয়েও একজিমা হতে পারে। ধুলো, কোনও পোকামাকড়, পোষ্য, ফুলের রেণুর কারণেও এই রোগ হতে পারে। ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাকের সংক্রমণের কারণেও এই রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠান্ডা, বেশি আর্দ্রতা বা আর্দ্রতার অভাব কিংবা বেশি ঘাম হওয়া— আবহাওয়াগত কারণেও একজিমা হতে পারে। অনেকের দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, বাদামজাতীয় তৈলবীজ, সয়াবিন, আটা-ময়দার খাবার, রেডমিট, মাশরুম সহ্য হয় না, খাবারও অনেক সময়ে একজিমার ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষকরা মনে করেন একটি শিশুর একজিমা হবে কিনা তা নির্ধারণ করে তাদের জীবনের প্রথম কয়েক বছর যে পরিবেশে তারা বেড়ে উঠেছে তার উপর, তা জিনগত কারণে প্রভাবিত হয় না। গবেষকরা দেখেছেন দুটি রাসায়নিক ডাইসোসায়ানেট এবং জাইলিনের কারণে একজিমা হতে পারে। ১৯৭০ সালে স্প্যানডেক্স, ননলেটেক্স ফোম, পেইন্ট এবং পলিউরেথেন উৎপাদনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডাইসোসায়ানেট প্রথম তৈরি করা হয়েছিল। পলিয়েস্টার এবং অন্যান্য উপকরণের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সেই সময়ে জাইলিনের উত্পাদনও বৃদ্ধি পায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭৫ সালের পরে, যখন সমস্ত নতুন গাড়ি একটি নতুন প্রযুক্তির দ্বারা সজ্জিত হয়ে ওঠে যার মাধ্যমে নিষ্কাশিত গ্যাস কম বিষাক্ত রাসায়নিকে রূপান্তরিত হয়, তখন আইসোসায়ানেট এবং জাইলিন উভয়ই অটোমোবাইল নিষ্কাশনের উপাদান হয়ে ওঠে। ইঁদুরের উপর করা গবেষণায় দেখা গেছে যে আইসোসায়ানেট এবং জাইলিনের সংস্পর্শে আসলে ইঁদুরের শরীরে চুলকানি, ব্যথা এবং তাপমাত্রা সংবেদনের সাথে সংযুক্ত রিসেপ্টরগুলোর কার্যকলাপ বৃদ্ধি করে একজিমা, চুলকানি এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে। গবেষকদের মতে ক্রমবর্ধমান শিল্পোন্নত বিশ্বে যে রোগগুলো ক্রমশ সাধারণ হয়ে উঠেছে তার পরিবেশগত কারণ মূল্যায়ন করলে শিশুদের যে রাসায়নিকের কারণে একজিমার মতো রোগ হয় তা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করা যেতে পারে।