ট্রিপটোফ্যান একটি এসেন্সিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড যা শরীরের জন্য জরুরি এবং প্রোটিন তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। আমাদের শরীর এই অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরি করতে পারে না, তাই আমাদের খাদ্য থেকে এটিকে সংগ্রহ করতে হয়। যেসব খাবারে ট্রিপটোফ্যান পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে প্রাণীজ খাদ্য যেমন মাছ, ডিম, মুরগির মাংস, দুধ এবং উদ্ভিদ জাতীয় খাবার যেমন কুমড়ো, তিল, বাদাম বা সয়া। শরীরে এর ব্যবহার বহুবিধ। প্রোটিন তৈরি থেকে শুরু করে পেশি, এনজাইম এবং স্নায়ুতন্ত্রের রাসায়নিক বার্তাবাহক বা নিউরোট্রান্সমিটার উত্পাদনে এটি সহায়তা করে। গবেষণা জানাচ্ছে ট্রিপটোফ্যান আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন, তবু শরীরের ব্যাকটেরিয়া এটিকে একটি রাসায়নিকে রূপান্তর করে যা প্রদাহ সৃষ্টি করে। ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডোর মেডিসিন বিভাগের গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন কীভাবে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া খাদ্যে উপস্থিত ট্রিপটোফ্যানকে বিপাকের মাধ্যমে এক রাসায়নিকে পরিণত করে যা প্রদাহ সৃষ্টি করে, যার ফলে সম্ভাব্যভাবে আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। আর্থ্রাইটিস জনসংখ্যার প্রায় ১% প্রভাবিত করে। এর ফলে হাত ও পা ফুলে যায়, ব্যথা হয় এবং সময় মতো চিকিত্সার অভাবে জয়েন্টের বিকৃতি ঘটে। গবেষণাটি ক্লিনিকাল ইনভেস্টিগেশন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। গবেষণায় জানা গেছে আমাদের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া- মাইক্রোবায়োম, এই ট্রিপটোফ্যান থেকে উপজাত তৈরি করে। স্পন্ডাইলোআর্থারাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে দেখা গেছে অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের পরিবর্তনের ফলে ইনডোল নামক রাসায়নিক শরীরে বৃদ্ধি পায়। আমাদের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ট্রিপটোফ্যান থেকে এই ইনডোল উৎপন্ন করে। ইঁদুর নিয়ে গবেষণায় অনুরূপ পরিবর্তন দেখা গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে ইনডোলের উপস্থিতিতে ইঁদুরের শরীরে অটোরিঅ্যাকটিভ টি-কোশের বিকাশ ঘটতে শুরু হয় যা আরও প্রদাহ সৃষ্টি করে। তাদের শরীরে নিয়ন্ত্রক টি-কোশ কম থাকে যা প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং তারা অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শুরু করে যা প্যাথোজেনিক। দেখা গেছে ইনডোলের উপস্থিতিতে অ্যান্টিবডিগুলো প্রদাহ বৃদ্ধি করে। গবেষণাপত্রটি উপসংহারে জানিয়েছে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং স্পন্ডাইলোআর্থারাইটিসের জন্য ইনডোল তৈরি প্রতিরোধ করা একটি থেরাপিউটিক পথ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।