প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপে জন্ম নেয় এক জাতীয় ছোটো ফার্ন। ফার্নটি লম্বায় মাত্র ৫ থেকে ১০ সেন্টিমিটার। শুধুমাত্র নিউ ক্যালেডোনিয়ায় পাওয়া যায় বলে এটি নিউ ক্যালেডোনিয়ান ফার্ন নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম মিসেপ্টেরিস ওব্লান্সোলাটা (Tmesipteris oblanceolata)। সম্প্রতি সেই ফার্ন রেকর্ড গড়েছে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ফার্নটিকে “সবচেয়ে বড়ো জিনোম খেতাব” প্রদান করেছে। মানুষের তুলনায় এর কোশের নিউক্লিয়াসে ৫০ গুণ বেশি ডিএনএ ভরা আছে। এই ফার্নের কোশ মাত্র এক মিলিমিটারের এক ভগ্নাংশ চওড়া। সেই রকমই একটি কোশের ডিএনএকে পর পর বিন্যস্ত করলে দেখা যাবে তার দৈর্ঘ্য প্রায় ১০৬ মিটার বা ৩৫০ ফুট। লন্ডনের বিখ্যাত বিগ বেন বেল টাওয়ারের চেয়ে ডিএনএ-টি বেশি লম্বা। ফার্নের জিনোমের ওজন প্রায় ১৬০ গিগাবেস পেয়ারস (জিবিপি) যা আগের রেকর্ডধারী জাপানের উদ্ভিদ প্যারিস জাপোনিকার চেয়ে ৭% বড়ো। মানুষের জিনোম তুলনামূলকভাবে অনেক ছোটো, মাত্র ৩.১ জিবিপি এবং সেটি পর পর বিন্যস্ত করলে প্রায় দু মিটার দীর্ঘ হবে। ২০২৩ সালে গবেষণা দলের দুই সদস্য প্রধান দ্বীপ, গ্র্যান্ড টেরে-তে পৌঁছে সেখানকার স্থানীয় বিজ্ঞানীদের সাথে কাজ করেছিলেন, যা আই-সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল।
মানুষের শরীরে ৩০ ট্রিলিয়নেরও বেশি কোশ রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। এই কোশের প্রতিটির মধ্যে একটি নিউক্লিয়াস রয়েছে যা ডিএনএ ধারণ করে। একটি জীবের সমস্ত ডিএনএকে এর জিনোম বলা হয়। এখনও পর্যন্ত, বিজ্ঞানীরা প্রায় ২০,০০০ জীবের জিনোমের আকার অনুমান করেছেন। প্রাণীদের মধ্যে, মার্বেল লাংফিশের জিনোম ১৩০ জিবিপি, যা বৃহত্তম বলে গণ্য করা হয়। উদ্ভিদের সবচেয়ে বড়ো জিনোম থাকলেও তাদের মধ্যে অবিশ্বাস্যভাবে ছোটো জিনোমও রয়েছে- যেমন মাংসাশী উদ্ভিদ জেনলিসি অরিয়া-র জিনোম মাত্র ০.০৬ জিবিপ। তবে গবেষকদের মতে বড়ো জিনোম থাকার অসুবিধা রয়েছে, কারণ যত বেশি ডিএনএ থাকবে, কোশগুলোকে তাদের ধরে রাখতে তত বড়ো হতে হবে। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে বড়ো কোশ থাকলে পাতার ছিদ্র বড়ো হতে হবে, যা তাদের বৃদ্ধিকে আরও ধীরে করে দেবে। তারা সহজেই প্রতিকূলতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেবে না বা লড়াই করতে পারবে না। গবেষকরা মনে করেন জিনোমের আকার তাই জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমির ব্যবহার পরিবর্তন এবং মানুষের দ্বারা সৃষ্ট অন্যান্য পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের প্রতি উদ্ভিদ কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায় তা প্রভাবিত করতে পারে।