নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে উঠে এসেছে যে জীবনের প্রথম দু বছরে অপুষ্টিতে ভুগলে তা শারীরিক বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে বিশেষ করে এশিয়া মহাদেশের লক্ষ লক্ষ শিশুর জন্য এটি একটি রূঢ় বাস্তব। ২০২২ সালে, সারা বিশ্বে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন বা তার বেশি শিশু — প্রায় ১৫ কোটি শিশু — স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পায়নি, এবং ৪.৫ কোটিরও বেশি শিশুদের মধ্যে ক্ষতির লক্ষণ দেখা গেছে বা তাদের উচ্চতার তুলনায় ওজন বৃদ্ধি কম হয়েছে। প্রতি বছর এক মিলিয়নেরও বেশি শিশু শীর্ণতা ও অপুষ্টির কারণে মারা যায় এবং ২৫০,০০০ এরও বেশি উচ্চতা বৃদ্ধি না হওয়া ও অপুষ্টির কারণে মারা যায়। তাদের বৌদ্ধিক বিকাশও হয় না। বয়সের তুলনায় উচ্চতায় খুব ছোটো হওয়া বা অত্যন্ত রোগা হওয়া দীর্ঘকালীন ও তীব্র অপুষ্টির লক্ষণ।
বেঞ্জামিন আর্নল্ড, ইউসিএসএফ-এর ফ্রান্সিস আই প্রক্টর ফাউন্ডেশনের সহযোগী অধ্যাপকের মতে ছয় মাস বয়সের আগেই যে শিশুদের বৃদ্ধি হ্রাস পায় তাদের মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। সুতরাং প্রসবপূর্ব সময়কালে মহিলাদের মধ্যে পুষ্টির উন্নতির ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। ইউসি বার্কলের নেতৃত্বে ১০০ জনেরও বেশি গবেষকের একটি আন্তর্জাতিক দল জড়িত ছিলেন যারা ১৯৮৭ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ৩৩টি প্রধান গবেষণা থেকে দু বছরের কম বয়সী প্রায় ৮৪০০০ শিশুর তথ্য পরীক্ষা করে। দক্ষিণ এশিয়া, সাব-সাহারান আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা এবং পূর্ব ইউরোপের ১৫টি দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। অপুষ্টির প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে দক্ষিণ এশিয়ায়, যেখানে ২০% শিশুর জন্মের সময় থেকেই বৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছিল এবং ৫২% এরও বেশি তাদের দ্বিতীয় জন্মদিনের মধ্যে শীর্ণ থেকে শীর্ণতর হয়ে গিয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার তথ্য অনুসারে মে মাসে জন্ম নেওয়া একটি শিশুর অপুষ্টির প্রভাবে বৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা জানুয়ারীতে জন্ম নেওয়া শিশুর তুলনায় অনেক বেশি। এর কারণ হিসেবে গবেষকরা অনুমান করছেন গর্ভাবস্থায় মায়েদের কাছে খাবারের প্রাপ্যতা নির্ভর করে ঋতুর উপর। যে ঋতুতে ফসল উৎপাদন হচ্ছে সেই সব ঋতুতে মায়েদের পুষ্টির আভাব হচ্ছে না।
বর্তমানে, বেশিরভাগ শৈশব পুষ্টি জনিত কার্যক্রম শিশুর ছয় মাস বয়সের পরে শুরু হয় যাতে শিশু মায়ের দুধ থেকে বঞ্চিত না হয়। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেড বলেছেন বেঞ্জামিন-চুং-এর মতে শিশুর ছয় মাস বয়সের আগেই শিশুর পুষ্টির বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হবে না হলে গবেষণায় প্রতিনিধিত্ব করা জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ শিশু এবং দক্ষিণ এশিয়ার অর্ধেকের মতো শিশুর বৃদ্ধিজনিত সমস্যা রোধ করা যাবে না। গবেষণাপত্রে গর্ভধারণের আগে মহিলাদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদানের প্রয়োজনীয়তা এবং গর্ভাবস্থায় এবং পরে সেই সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। গবেষকদের মতে একজন মা যিনি অপুষ্টিতে ভুগছেন এবং সন্তান জন্ম দিয়েছেন সেই সন্তানের হাত ধরে অপুষ্টির এই চক্রটি পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হবে।