আমাদের প্রাচীন পূর্বপুরুষদের কাছে একটি মৌলিক চ্যালেঞ্জ ছিল পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবারের জোগান। দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম যেমন বাচ্চাদের লালন-পালন করা, আশ্রয়ের খোঁজে ঘুরে বেড়ানো এবং পর্যাপ্ত খাবারের নিরাপত্তা, সমস্ত কিছুর জন্য প্রয়োজন শক্তির। যাদের শরীরে শক্তির জোগান বেশি তারা দক্ষতার সাথে সমস্ত কাজ সম্পন্ন করতে পারত। তাদের দীর্ঘকাল বেঁচে থাকার ক্ষমতা ছিল এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে তাদের সন্তান-সন্ততিরাও বিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে বেঁচে থাকার জন্য আরও বেশি সক্ষম ছিল। প্রকৃতিতে, মিষ্টি স্বাদ শর্করার উপস্থিতি বোঝায়, এবং এটি ক্যালোরির একটি চমৎকার উৎস। তাই মিষ্টতা উপলব্ধি করতে সক্ষম প্রাণীরা শনাক্ত করতে পারে যে সম্ভাব্য খাবারে, বিশেষ করে গাছপালাতে মিষ্টির উপস্থিতি ছিল কিনা এবং কতটা। তাই আমাদের প্রাচীন পূর্বপুরুষরা এমন খাবার সংগ্রহ করত যার স্বাদ মিষ্টি এবং তার ফলে তারা শরীরে অনেক বেশি ক্যালোরি মজুত করতে পারত। এই পদ্ধতি তাদের কম পরিশ্রমে প্রচুর ক্যালোরি সংগ্রহ করতে সাহায্য করেছিল।
মিষ্টি স্বাদ শনাক্তকরণের ক্ষমতা নিহিত থাকে আমাদের জিনে। এই স্বাদ শনাক্তকরণ ঘটনাচক্রে গড়ে ওঠেনি এটি আমাদের শরীরের জেনেটিক ব্লুপ্রিন্টে খোদাই করা রয়েছে। জিহ্বা পৃষ্ঠের নীচে স্বাদকোরকে মিষ্টি অনুভূত হয় আর মুখের অভ্যন্তরে ছোটো ছোটো স্বাদের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে। স্বাদকরোকের মধ্যে কোশের বিভিন্ন উপপ্রকার প্রতিটি একটি নির্দিষ্ট স্বাদের প্রতি প্রতিক্রিয়াশীল- টক, নোনতা, তিক্ত বা মিষ্টি এবং উমামি, ইংরেজিতে যাকে সেভরি বলা যেতে পারে অর্থাৎ না নোনতা, না মিষ্টি। সাবটাইপগুলো তাদের স্বাদের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ রিসেপ্টর প্রোটিন তৈরি করে, যা মুখের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে খাবারের রাসায়নিক গঠন অনুভব করে। একটি সাবটাইপ তিক্ত বা তেতো রিসেপ্টর প্রোটিন তৈরি করে, যা টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থের প্রতি সাড়া দেয়। অন্য একটি উমামি রিসেপ্টর প্রোটিন তৈরি করে, যা প্রোটিন গঠনকারী অ্যামিনো অ্যাসিডকে শনাক্ত করে। মিষ্টি শনাক্তকারী কোশগুলো TAS1R2/3 নামে একটি রিসেপ্টর প্রোটিন তৈরি করে, যা শর্করা শনাক্ত করে। যখন এই প্রক্রিয়াটি সংগঠিত হয়, তখন তা প্রক্রিয়াকরণের জন্য মস্তিষ্কে একটি নিউরাল সংকেত যায়। এইভাবে আমরা খাবারের মিষ্টতা উপলব্ধি করে থাকি। আমাদের ইন্দ্রিয় পরিবেশের অগণিত দিক শনাক্ত করে, আলো, তাপ, গন্ধ কিন্তু আমরা মিষ্টির দিকে যেভাবে আকৃষ্ট হই সেভাবে আমরা এগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হই না। মিষ্টি রিসেপ্টরের মতো তিক্ততা শনাক্ত করার রিসেপ্টার টক্সিন জাতীয় বস্তু শনাক্ত করে এবং মস্তিষ্ক যথাযথভাবে সাড়া দেয়। মিষ্টি স্বাদ যেমন আমাদের আরও খেতে প্রলুব্ধ করে তেমনই তেতো স্বাদের কোনো জিনিস মুখে পরলে আমরা তা মুখ থেকে বার করে দিয়ে থাকি। অর্থাৎ জিহ্বা স্বাদ শনাক্ত করলেও আমাদের মস্তিষ্কই সিদ্ধান্ত নেয় যে আমরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব। যদি একটি নির্দিষ্ট সংবেদনের প্রতি প্রতিক্রিয়া প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধারাবাহিকভাবে সুবিধাজনক প্রতিপন্ন হয়, প্রাকৃতিক নির্বাচন তাদের গ্রহণ করে এবং তারা সহজাত হয়ে ওঠে। তেতো স্বাদের ক্ষেত্রেও তাই। নবজাতকদের তেতো স্বাদ অপছন্দ করতে শেখানোর দরকার নেই – তারা এটি সহজাতভাবে প্রত্যাখ্যান করে। বিপরীতে মিষ্টি স্বাদের প্রতি মানুষ তার জন্মের মুহুর্ত থেকেই আকৃষ্ট হয়। এই প্রতিক্রিয়াগুলো পরবর্তীকালে শেখার মাধ্যমে গড়ে ওঠে না, সেগুলো মানুষের আচরণের মূলে থাকে।