আমাদের রক্তে অক্সিজেন বহনকারী কণিকা থেকে শুরু করে নিউরন যা আমাদের চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করে, তা সবই বিভিন্ন রকমের কোশ দিয়ে তৈরি। জার্মানি, কানাডা, স্পেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা সাধারণ দেহে প্রতিটা ধরনের পৃথক কোশ কতগুলি রয়েছে তার একটা গবেষণা প্রকাশ করেছেন। ১৫০০ টারও বেশি কেস বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তারা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের শরীরে প্রায় ৩৬ ট্রিলিয়ন কোশ থাকে, আর প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের প্রায় ২৮ ট্রিলিয়ন কোশ থাকে। দেখা যায় একটা ১০ বছর বয়সী শিশুর কোশের সংখ্যা ১৭ ট্রিলিয়নের আশেপাশে। মোট কোশের সংখ্যার পাশাপাশি, কোশগুলোকে তাদের আকারের উপর ভিত্তি করে গোষ্ঠীবদ্ধ করে তারা দেখেছেন, আকারের দিক দিয়ে প্রতি ধরনের কোশ শরীরের ভরের ক্ষেত্রে প্রায় একই পরিমাণ অবদান রাখে।
প্রকাশিত গবেষণাপত্রে তারা লিখেছেন যেন একটা প্রাকৃতিক ব্যালেন্সিং অ্যাক্ট চলছে, যেখানে বিভিন্ন বিভাগ সমান রাখার জন্য বড়ো কোশ কম এবং ছোটো কোশ বেশি তৈরি করা হয়। তারা আরও দেখেছেন প্রতি বিভাগে কোশের আকারের ভিন্নতার অনুপাতও প্রায় একই রকম ছিল। শরীরের ক্ষুদ্রতম কোশ যেমন, লোহিত রক্তকণিকা এবং বৃহত্তম কোশ যেমন পেশি তন্তুর আপেক্ষিক আকার একটি নীল তিমির সাথে কাঠবেড়ালির আকারের তুলনা করার মতো। গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, আমাদের কোশগুলো তাদের বিভিন্ন ভূমিকা পালনের জন্য নিখুঁত আকার বিশিষ্ট হয় – এবং এই আকারের স্কেলে কোনও ব্যাঘাত ঘটা মানে সাধারণত রোগের উপস্থিতি নির্দেশ করে। এটা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, প্রকৃতি এই ধরনের কোশের আকার নিয়ন্ত্রণ করছে, এবং তা খুব স্মার্টভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।
বিজ্ঞানীরা আগেও আমাদের দেহে কোশের সংখ্যা অনুমান করার চেষ্টা করেছেন, এবং নতুন গবেষণার ফল আগেরগুলোর মতোই। কিন্তু এই সর্বশেষ গবেষণার বিশেষত্ব যে এটা তুলনামূলক কোশের আকার, এবং সংখ্যা দেখার চেষ্টা করেছে। ভবিষ্যতের অধ্যয়নগুলোতে দেখার সুযোগ থাকবে যে কীভাবে প্রকৃতি আমাদের দেহ কোশের আকার এবং সংখ্যা নিয়ন্ত্রন করছে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে কাজ করতে সাহায্য করছে। এই গবেষণা PNAS -এ প্রকাশিত হয়েছে।