মস্তিষ্কের বড়ো মাপ কি বুদ্ধির পরিচায়ক? সামাজিকভাবে কোনো আচরণ শেখার ক্ষমতা একমাত্র কী মানুষের আছে? , শুধুমাত্র মানুষের মধ্যেই সাংস্কৃতিক দিক ও শেখা জড়িত নয়। চড়ুইয়ের মধ্যে ডাকের পরিবর্তন, তিমিদের বিকশিত উপভাষা ও ঐতিহ্য, ডলফিন আঞ্চলিক শিকারের কৌশল এবং বনমানুষ, কাক এবং ডলফিনের হাতিয়ারের কৌশল ইঙ্গিত দেয় যে সামাজিকভাবে শেখার আচরণ প্রাণী সমাজেও উপস্থিত রয়েছে। এই সাংস্কৃতিক আচরণগুলোর মধ্যে কিছু আচরণ সময়ের সাথে পরিমার্জিত ও উন্নত হয়। দেখা গেছে ভ্রমরের মতো একটা ছোটো পতঙ্গ তার ছোট্ট মস্তিষ্ক ব্যবহার করে কাজ শিখে অন্য ভ্রমরকে শেখাতে পারছে। ল্যাবে পরীক্ষায় দেখা গেছে ভ্রমর একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারে, সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারে, শূন্যে গণনা করতে পারে এবং মৌলিক গাণিতিক সমীকরণগুলি সম্পাদন করতে পারে। তাদের মৌচাক নির্মাণও সম্মিলিত বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।
লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি থেকে আচরণগত বিজ্ঞানী অ্যালিস ব্রিজস এবং সহকর্মীরা মানুষের সাহায্য ছাড়াই ১২ বা ২৪ দিন যাবত মোট ৩৬ বা ৭২ ঘন্টার একটা দুধাপের ধাঁধা ভ্রমরদের উপনিবেশে স্থাপন করেছিলেন। ভ্রমররা তাদের জীবদ্দশায় গড়ে প্রায় ৮ দিন চরে বেড়ায়। এই ধাঁধা সমাধান করতে তাদের জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় কেটে গেছে। একটা হলুদ বৃত্তের মধ্যে প্লাস্টিকের ঢাকনার নিচে এক ফোঁটা চিনি রাখা ছিল। ভ্রমরদের লাল ও নীল দুটো ট্যাব ঠেলে সেখানে পৌঁছোতে হত। ভ্রমররা বুঝতে পারছিল না পুরস্কার হিসেবে তাদের যে মিষ্টি খাবার দেওয়া হয়েছে সেখানে কীভাবে পৌঁছোতে হবে। একজন মানুষকে একটা অতিরিক্ত পুরস্কার ব্যবহার করে তাদের পথ দেখাতে হয়েছিল। কিন্তু একবার ভ্রমররা এই পথ খুঁজে পেলে, তারা অন্যদের শিখিয়েছে কীভাবে মিষ্টি খাবার পুনরুদ্ধার করতে দুটো ট্যাব সরাতে হয়। এরকম ধরনের পরীক্ষা শিম্পাঞ্জিদের ওপরেও করে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে একজন কাজটা শিখতে পারলে, অন্যদের শিখিয়ে দিচ্ছে। নেচারে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে এই ধরনের কাজ প্রথমে মৌমাছি এবং শিম্পাঞ্জিদের শেখাতে হয়েছিল। কিন্তু শিম্পঞ্জি বা মৌমাছি সমাজে যদি একজন বিরল উদ্ভাবক থাকে যে এটা আবিষ্কারে সক্ষম, তাহলে তাদের শেখার ধারণা প্রাণীদের সংস্কৃতিতে ঢুকে যায় যা তাদের আগামী প্রজন্ম ব্যবহার করতে পারে।