মানুষের মস্তিষ্কের মতো শক্তিশালী ও জটিল কোনো কম্পিউটার নেই। মানুষের মস্তিষ্ক এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। এটি গড়ে আনুমানিক ৮৬ বিলিয়ন নিউরন ধারণ করে। প্রতিটি নিউরন ১০০০০ টি অন্যান্য নিউরনের সাথে সংযুক্ত থাকে, যারা ক্রমাগত একে অপরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে। এই নিউরনগুলি তথ্যকে এমন পরিমাণে এবং এত দ্রুত গতিতে প্রক্রিয়া করতে পারে যা কম্পিউটিং প্রযুক্তি এখনও পেরে ওঠেনা। মস্তিষ্কের সাফল্যের চাবিকাঠি হল প্রসেসর এবং মেমরি ডিভাইস এই দুই ভূমিকাতেই নিউরনের দক্ষতা। বেশিরভাগ আধুনিক কম্পিউটিং ডিভাইসে প্রসেসর এবং মেমরি ডিভাইস পৃথক ইউনিট হিসেবে থাকে।
কম্পিউটিংকে মস্তিষ্কের মতো করার জন্য অনেক প্রচেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ইলেকট্রনিক্সের সাথে বাস্তব, মানব মস্তিষ্কের টিস্যুকে একীভূত করে ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি ব্লুমিংটনের প্রকৌশলী ফেং গুওর নেতৃত্বে একটি দল এটিকে স্পিচ রিকগনিশন এবং ননলাইনার ইকুয়েশন ভবিষ্যদ্বাণী করার মতো তৈরি করেছে। এটার নাম দিয়েছেন, তারা Brainoware (ব্রেইনোওয়্যার)। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর চলমান একটি বিশুদ্ধ হার্ডওয়্যার কম্পিউটারের তুলনায় নির্ভুলতার দিক থেকে সামান্য কম কিন্তু গবেষণাটি একটি নতুন ধরনের কম্পিউটার স্থাপত্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
মানুষের প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেলগুলিকে বিভিন্ন ধরণের মস্তিষ্কের কোষে বিকাশের জন্য সংযুক্ত করার পর তা সংযোগ এবং কাঠামো দিয়ে অর্গানয়েড নামক ত্রি-মাত্রিক ক্ষুদ্র-মস্তিষ্ক সংগঠিত করেছিল। এগুলি সত্যিকারের মস্তিষ্ক নয়, তবে চিন্তা, আবেগ বা চেতনার ছাড়া কেবল টিস্যুর বিন্যাস। এগুলি মানুষের মস্তিষ্কের মধ্যে প্রবেশ না করেই মস্তিষ্ক কীভাবে বিকাশ করে এবং কীভাবে কাজ করে তা অধ্যয়নের জন্য দরকারী। ব্রেইনোওয়্যারে মস্তিষ্কের অর্গানয়েড উচ্চ-ঘনত্বের মাইক্রোইলেক্ট্রোডের সাথে সংযুক্ত থাকে, যা এক ধরণের কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে, এটা কম্পিউটিং রিসার্ভার নামে পরিচিত। বৈদ্যুতিক উদ্দীপনা অর্গানয়েডের মধ্যে তথ্য পরিবহন করে, কম্পিউটিং রিসার্ভারে সেই তথ্য প্রক্রিয়া করা হয়, এরপর ব্রেইনোওয়্যার স্নায়ু কার্যকলাপের আকারে তার গণনা প্রকাশ করে।
ব্রেইনোওয়্যারকে দুদিন ট্রেনিং দিয়ে ৮ টা পুরুষ কণ্ঠের ২৪০ টা অডিও ক্লিপ শুনিয়ে একজন বক্তার কন্ঠস্বর চিনতে বলা হয়েছিল। ব্রেইনোওয়্যার ৭৮% নির্ভুল উত্তর দিয়েছিল। ৪ দিন কোনো রকম তত্ত্বাবধান ছাড়া ব্রেইনোওয়্যারকে শিখতে দিয়ে হেনন ম্যাপের পূর্বাভাস দিতে বলা হয়েছিল, সেখনে ব্রেইনোওয়্যার কৃত্রিম নিউরাল নেটয়ার্কের তুলনায় বেশি নির্ভুল পূর্বাভাস দিয়েছে। এখানে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অর্গানয়েডগুলিকে জীবিত এবং স্বাস্থ্যকর রাখার সমস্যা এবং পেরিফেরাল সরঞ্জামের শক্তি খরচের মাত্রা। কিন্তু ব্রেইনোওয়্যার শুধুমাত্র কম্পিউটিংয়ের জন্য নয়, মানব মস্তিষ্কের রহস্য বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।