গবেষকরা প্রায় এগারো বছর আগে অনুমান করেছিলেন যে প্রতি বছর সারা বিশ্বে প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ ছত্রাকের সংক্রমণে মারা যাচ্ছে। কিন্তু গবেষকদের মতে বর্তমানে সে সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে- প্রায় ৩.৮ মিলিয়ন মানুষ প্রতি বছর ছত্রাক সংক্রমণে মারা যাচ্ছে। বলতে গেলে, সারা বিশ্বে মোট মৃত্যুর প্রায় ৬.৪ % ছত্রাক সংক্রমণের ফলে ঘটছে। বিশ্বের মোট মৃত্যুর প্রায় ১৬% ঘটছে হৃদরোগের কারণে, তারপরের স্থানে রয়েছে স্ট্রোক যার কারণে ১১% মানুষের মৃত্যু ঘটছে, সিগারেট খাওয়ার ফলে ফুসফুসের রোগে (সিওপিডি) আক্রান্ত হয়ে ৬% মানুষ মারা যাচ্ছে কিন্তু ৩,২২৮,০০০ মৃত্যুর প্রায় এক তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী ছত্রাক সংক্রমণ।
ছত্রাক সংক্রামিত অসুখ বলতে বহু দিন পর্যন্ত ধরেই নেওয়া হত শুধুমাত্র ত্বকের কোনও সমস্যা। কিন্তু ইদানীং ফুসফুসের সংক্রমণ তো বটেই, এমনকী সেপ্টিসেমিয়া, প্রস্রাবের নালির সংক্রমণ, কিডনির সংক্রমণের ক্ষেত্রেও মিলছে ছত্রাকের হদিস। নিঃশব্দে এই সমস্যা বড়সড় ঠাঁই করে নিয়েছে রোগের মানচিত্রে। ফুসফুসের সংক্রমণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাণঘাতী ছত্রাক হল অ্যাসপারজিলাস ফিউমিগেটাস এবং অ্যাসপারজিলাস ফ্লেভাস। এই ছত্রাক সংক্রমণের কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে হাঁপানি, টিবি এবং ফুসফুসের ক্যান্সার দেখা যেতে পারে আবার লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি, বা যাদের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে অথবা যারা ইন্টেন্সিভ কেয়ারে রয়েছেন তাদের মধ্যেও সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। এদের মধ্যে অনেক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে কারণ কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা ধরতে পারেন না যে রোগীদের ছত্রাকজনিত রোগ আছে – অথবা অনেক দেরি করে সংক্রমণ ধরা পড়ে। আবার অনেক ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে পরিকাঠামোর অভাব বাধা হয়ে দাঁড়ায় আর কিছু ক্ষেত্রে কার্যকরী ছত্রাকরোধী ওষুধের অভাবের কারণে মৃত্যু ঘটে। পরীক্ষার মাধ্যমে শুধুমাত্র এক তৃতীয়াংশ ব্যক্তিদের শনাক্ত করা যায় যে তাদের আসলে ছত্রাকের সংক্রমণ রয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের মতো, অ্যান্টিফাঙ্গাল প্রতিরোধও একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। নির্দিষ্ট ধরনের ছত্রাকনাশক দিয়ে ফসলে স্প্রে করার ফলে অ্যাজোল নামে পরিচিত এক ধরনের অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের প্রতিরোধের হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষকদের মতে আমরা ছত্রাকের দ্বারা বেষ্টিত, এবং ছত্রাক আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে এবং আমাদের ত্বকে বাস করে। তাই ছত্রাককে গোড়ায় বিনাশ করাই ভাল। না হলে রোগ অনেক গভীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।