গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনের মাটি আর তাতে জন্মানো গাছের কাঠ, বিশ্বের বৃহৎ কার্বন সিঙ্ক কারণ এতে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ কার্বন সঞ্চিত রয়েছে। কিন্তু কার্বন সিঙ্ক হিসেবে তাদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের সম্মুখীন। কার্বন সিঙ্ক বলতে বোঝায়, যা বায়ুমণ্ডলে যতটা কার্বন নির্গত করে তার থেকে বেশি কার্বন শোষণ করে, যেমন গাছপালা, মহাসাগর, মাটি। কিন্তু এই অঞ্চলের বন পুনরুদ্ধার নিয়ে বিশেষজ্ঞরা চিন্তিত। তারা দীর্ঘকাল ধরে ভাবছেন যে গ্রীষ্মমন্ডলীয় মাটিতে পুষ্টির অভাব, বিশেষত ফসফরাসের অভাব এই অঞ্চলের বনের পুনরুদ্ধারে বাধা হয়ে দাঁড়াবে কিনা। প্রধানত মাটির ক্ষয়ের জন্য এই স্থানে ফসফরাসের অভাব থাকে। নিউ ফাইটোলজিস্টে এ বিষয়ে আশাব্যঞ্জক একটি অধ্যয়ন প্রকাশিত হয়েছে। ক্যারি ইনস্টিটিউট অফ ইকোসিস্টেম স্টাডিজের অরণ্য বাস্তুবিজ্ঞানী, সারা ব্যাটারম্যান জানিয়েছেন, এ নিয়ে বিশেষ দুশ্চিন্তা করতে হবে না। তাদের গবেষণা জানাচ্ছে বনের নিজস্ব নমনীয় কৌশল তাদের দুষ্প্রাপ্য পুষ্টির চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে। এই নমনীয় কৌশলের জন্য এই স্থানের গাছ পুষ্টির সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ভবিষ্যতে কার্বন সিঙ্ককে সমর্থন করতে সক্ষম হতে পারে। তাদের গবেষণা দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু সংকটের সমাধান হিসাবে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অরণ্যের বন সংরক্ষণের সম্ভাবনার কথা জানাচ্ছে।
বন পুনরুদ্ধারকারী প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলোর জন্য, গবেষকদের কিছু ব্যবহারিক পরামর্শ আছে। তাদের মতে বনের পুর্নগঠনের জন্য পুষ্টির সীমাবদ্ধতা মাথায় রাখতে হবে। গাছ লাগানোর সময় এমনভাবে বিভিন্ন প্রজাতি মিশিয়ে লাগাতে হবে যাতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের ফসফরাস গ্রহণের কৌশল আলাদা আলাদা হয়। ব্যাটারম্যান বলেন, বর্তমানে বেশিরভাগ বন পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে গাছের প্রজাতির চারা সহজে পাওয়া যায় তা মাটিতে রোপণ করেই বনভূমি বিস্তার করার চেষ্টা করা হয়, যা বিশেষ ফলপ্রসূ নয়। তবুও, ব্যাটারম্যান প্রাকৃতিক জলবায়ু সংকটের সমাধান হিসাবে বন ব্যবহার করার বিষয়ে আশাবাদী বোধ করেন। তিনি বলেন বনসৃজন কম খরচে করা যায়, তার সাথে নানা সুবিধা পাওয়া যায়, যেমন জলাশয় রক্ষা, জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি এবং আদিবাসীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি রক্ষা। কিন্তু বনসৃজন সঠিকভাবে বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে করা দরকার যাতে কার্বন দীর্ঘ সময়ের জন্য সঞ্চিত থাকতে পারে।