কিছু সাপ তাদের শিকার খুঁজে বের করে, কেউ কেউ আবার বসে তাদের শিকার কাছে আসার অপেক্ষায় থাকে। স্পাইডার-টেলড হর্নড ভাইপার (Pseudocerastes urarachnoides), সামান্য নড়া চড়া আর দোলা দিয়ে মাকড়সার মতো দেখতে লেজের ডগা তৈরি করে তার খাবার খুঁজে পায়। সাপের লেজের ডগায় নাচতে থাকা ‘মাকড়সা’ আসলে কোশ ও কলার একটি দলা যার দুপাশে লম্বা লম্বা আকর্ষের মতো ঝুলতে থাকে। বিশ্রামরত অবস্থায় নিরীহ দেখতে এই সাপ এক মুহুর্তের মধ্যে নিজের প্রকৃত রূপ ধারণ করে। পাথুরে আবাসস্থলের সাথে নিজের শরীর কতটা ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে পেরেছে তার ওপর বিবেচনা করে সাপের ভয়ঙ্কর রূপ আরও জোরদার হয়। সাধারণ চোখে দেখলে, স্থির পাথুরে একটা অংশ খাবার খুঁজতে থাকা পাখির কাছে সাপ হিসেবে মোটেও ধরা পড়ে না। স্পাইডার-টেলড হর্নড ভাইপার সাপের বিস্তৃত লেজের অলঙ্করণের রেকর্ড রয়েছে। তবুও এর অবিশ্বাস্য শিকারের কৌশল বিজ্ঞানীদের নজর এড়িয়ে গেছে। শিকাগোর প্রাকৃতিক ইতিহাসের ফিল্ড মিউজিয়ামে ৩৫ বছর ধরে একটি একক, সংরক্ষিত নমুনা রাখা ছিল, যেখানে নমুনার লেজটি অস্বাভাবিক ছিল, তবুও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে পারেননি যে এটি একটি নতুন প্রজাতি নাকি লেজের বিকৃতি ছিল। অদ্ভুত দেখতে লেজের ডগাটি টিউমার বা পরজীবীর জন্য দায়ী মনে করা হত।
২০০৩ সালে বিজ্ঞানীরা একই ধরণের আরেকটি স্পাইডার-টেলড হর্নড ভাইপার খুঁজে পেয়েছিলেন, যা থেকে তারা নিশ্চিত হন যে এটি আসলে একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতি।তবে বন্য অঞ্চলে এই সাপের আচরণ সম্পর্কে তাদের বিশেষ জানা ছিলনা। কিছু নমুনার পেটে পাখির অবশেষ পাওয়া গেলেও সাপটি কীভাবে উঁচুতে উড়ে যাওয়া পাখি শিকার করত তা স্পষ্ট ছিল না। ইরানের গবেষকরা ২০১৫ সালে স্পাইডার-টেলড হর্নড ভাইপারকে এর প্রাকৃতিক আবাসস্থলে শিকার ধরতে দেখেছিলেন। তারা দেখেন যে স্পাইডার-টেলড হর্নড ভাইপাররা তাদের লেজ নাড়ানোর জন্য গড়ে প্রায় এক তৃতীয়াংশ সময় ব্যয় করে ওত পেতে থাকে। একটি পাখি চোখে পড়লে সাপের লেজ নাড়ানোর তীব্রতা প্রায় চারগুণ বেড়ে যায়। অন্যান্য ভাইপার এবং সাপও শিকারের সময় একই রকম লেজের কৌশল ব্যবহার করে (যাকে বিজ্ঞানীরা ‘কডাল লুরিং’ বলেন), স্পাইডার-টেলড হর্নড ভাইপারের কৌশলটি অনেক পরিশীলিত। প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, এদের কৌশলটি পরিযায়ী পাখিদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো কাজ করে। যে পাখিরা এই আলপাইন অঞ্চলে একটি মাকড়সা তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে কী ঝুঁকি থাকতে পারে তার সাথে পরিচিত নয়। ফলে পাখিগুলি এই সাপের ভোজে পরিণত হয়।