মানুষ যত মহাকাশে রকেট, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে চলেছে, দেখা গেছে এই সমস্ত রকেট, স্যাটেলাইট, স্পেস ক্র্যাফটের ধ্বংসাবশেষ, এগুলোর অকেজো অংশ পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকছে, এছাড়াও কিছু উল্কাপিণ্ডও কক্ষপথে রয়েছে। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি জানিয়েছে ৬০ বছরেরও বেশি সময় যাবত মহাকাশীয় ক্রিয়াকলাপের ফলে বর্তমানে ৯৩০০ টনেরও বেশি উপাদান পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। রকেট উৎক্ষেপণের সময় বৃহৎ, বিলুপ্ত উপগ্রহ বা ক্ষুদ্র রঙের কণা, প্রাথমিকভাবে পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ১৬০-১০০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থিত ‘লো আর্থ অরবিট’ (LEO)-এ একত্রিত হয়। LEO হল স্যাটেলাইট ইমেজিংয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল, এখানে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (ISS)-ও রয়েছে। কিন্তু এই “অরবিটাল স্পেস জাঙ্কইয়ার্ড” বা মহাকাশীয় বর্জ্যের ফলে ISS-এর জন্য সংঘর্ষের ঝুঁকি তৈরি হয়। বর্তমানে, এখানে ৪৫৫০ টিরও বেশি অপারেশনাল স্যাটেলাইট এবং ৩০০০ টি অকার্যকর বস্তু এই অঞ্চলে রয়েছে। সংঘর্ষের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সিস্টেম দ্বারা ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করতে হয়। LEO-তে বস্তুর গতি ঘণ্টায় প্রায় ১৭০০০ মাইল, ফলে ছোটো বস্তু থেকেও মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এরপরে কেসলার সিনড্রোম সম্ভাবনা থাকে যাতে কক্ষপথের ধ্বংসাবশেষের আবর্জনার মধ্যে সংঘর্ষের ফলে আরও আবর্জনা তৈরি হয়, ফলে আরও সংঘর্ষ বাড়তে বাড়তে তা বড়ো আকার ধারণ করে। নানা ভাবে এই বর্জ্য মোকাবিলা করার চেষ্টা করা হয়।
জাপানের EX-Fusion কোম্পানি, অস্ট্রেলিয়ার EOS Space Systems এর সাথে মিলে মহাকাশীয় ধ্বংসাবশেষ মোকাবিলা করার জন্য, মূলত ফিউশন শক্তির জন্য ডিজাইন করা লেজার প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করছে। ক্যানবেরার বাইরে অবস্থিত একটি মানমন্দিরে একটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন লেজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গবেষকদের বক্তব্য অনুযায়ী, মিশনটি দুটি পর্বে বিভক্ত। প্রাথমিক পর্যায়ে, লেজারটি ১০ সেন্টিমিটারের কম মাপের ধ্বংসাবশেষ ট্র্যাক করতে নিযুক্ত করা হবে। তবে পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে লেজার ব্যবহার করে এই ধরনের ছোটো ছোটো টুকরো শনাক্ত করা বেশ চ্যালেঞ্জিং । দ্বিতীয় পর্যায়ে এই বর্জ্যগুলোর গতিবেগ কমিয়ে তাদের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ফিরিয়ে আনার কথা ভাবা হচ্ছে, যাতে এগুলি বায়ুমণ্ডলে ঢুকলে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। EX-Fusion-এর প্রযুক্তি হল ডায়োড-পাম্পড সলিড-স্টেট (DPSS) লেজার। DPSS লেজারগুলি দ্রুতগতিতে চলমান মহাকাশীয় ধ্বংসাবশেষে বল প্রয়োগ করার জন্য স্পন্দিত শক্তি ব্যবহার করে, যা ব্রেকের মতো কাজ করে এই বর্জ্যগুলোর গতি কমিয়ে টুকরোগুলিকে সরিয়ে দেয়।