৪৫০ মিলিয়ন বছর আগে অর্ডোভিসিয়ান আমলে মস পৃথিবীতে আসে। গবেষকদের মতে তখন জল পাওয়ার জন্য, মাধ্যাকর্ষণ, তাপমাত্রা ওঠানামা বা অতিবেগুনী রশ্মির সংস্পর্শ আসা এরকম নানা সমস্যার সাথে মানিয়ে নিতে তাদের কোনো পোষক জীবের প্রয়োজন পড়ে। সেসময় পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে থাকত ছত্রাক। তাদের শিকড়ের মতো মাইসেলিয়াম, পুষ্টি গ্রহণ করতে সক্ষম ছিল। এই ছত্রাকের সাথে মসের নতুন সম্পর্ক গড়ে ওঠে, ছত্রাকের থেকে নেওয়া পুষ্টির বিনিময়ে, মস তাদের কার্বন জোগাতে থাকে। প্ল্যান্ট জার্নাল -এ গবেষকরা ব্যাখ্যা করেছেন অন্তত ৮০% আধুনিক গাছপালা এখনও ছত্রাকের সাথে কোনো না কোনোভাবে সহযোগিতা পায়, যা তাদের শক্তিশালী হয়ে উঠতে এবং আরও স্থিতিস্থাপক হয়ে উঠতে সাহায্য করে।
এই গবেষকরা আধুনিক ভূমিতে বসবাসকারী উদ্ভিদের জৈব রাসায়নিক পথগুলো জানার জন্য মসের ওপর ইঞ্জিনিয়ারিং করে প্যাচৌলি তেলের মতো পণ্য পেয়েছেন। তারা নানা স্থানে ও মহাকাশ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এর দারুণ সম্ভাবনা দেখেছেন। স্পেস ফ্লাইটের সময় কার্বন ডাই অক্সাইডকে অক্সিজেনে রূপান্তর করার সময় মস কার্যকর হতে পারে। মস অন্যান্য গাছপালা সহ নির্মাণ সামগ্রী বা ওষুধের জন্য প্রাকৃতিক ফ্যাব্রিকেটর হিসাবে কাজ করতে পারে। তাদের মতে মঙ্গল গ্রহে গাছপালা বিস্তার করার জন্য মস নিয়ে গিয়ে চেষ্টা করা যেতে পারে, কারণ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করার ক্ষেত্রে মসের বিরাট ভূমিকা ছিল।
গবেষকরা ল্যাবে তিন মাস ধরে, ফিসকোমিট্রিয়াম প্যাটেনস নামক মস নিয়ে বিভিন্ন টেরারিয়ামে পর্যবেক্ষণ করেছেন। টেরারিয়াম মাটি ও গাছপালা সহ তাপমাত্রা-নিয়ন্ত্রিত কাচের বদ্ধ পাত্র। বদ্ধ টেরারিয়ামের স্বচ্ছ দেয়াল তাপ এবং আলো প্রবেশ করতে দেয়, যা উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য একটা অনন্য পরিবেশ তৈরি করে। কিছু টেরারিয়ামে ছত্রাক ছাড়াই মস ছিল, অন্যগুলোতে ভূমিতে বসবাসকারী মর্টিরেলাসি ছত্রাকের দুটি প্রজাতির সাথে মস রাখা ছিল। এই মর্টিরেলাসি ছত্রাক প্রথম যখন গাছপালা এসে ভূমি দখল করা শুরু করেছিল,তখন থেকেই ছিল। মাইক্রোস্কোপি, জেনেটিক অ্যানালাইসিস এবং রাস্পবেরি পাই মাইক্রোকম্পিউটার ব্যবহার করে, গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন এই মিথস্ক্রিয়ায় ছত্রাকের মধ্যে অবস্থিত এন্ডোব্যাক্টেরিয়া একটা ভূমিকা পালন করে থাকে। যখন এন্ডোব্যাকটেরিয়া উপস্থিত থাকে, তখন ছত্রাক তাদের মসের সাথে আরও সহজে যোগাযোগ করতে পারে।