রান্নাঘরের তাকের কোণায়, বাথরুমের পাইপে, বইয়ের তাকে, ট্রেনের কামরায়, অফিসের কোণায়, হাসপাতাল, দোকান সর্বত্র অবাধ গতি এই প্রাণীর। রোমশ ছপেয়ে, আবার কিছুটা উড়তেও পারে এমন এই পোকা শত চেষ্টা করলেও মেরে দূর করা যায়না। এদের দেখলেই একরাশ ঘেন্না, বিরক্তি তৈরি হয়। এক গবেষণায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপ এবং তার বাইরেও বিশ্বজুড়ে আরশোলা ছড়িয়ে পড়ার কারণ জানার জন্য তাদের জেনেটিক্স ব্যবহার করা হয়েছে। অনুসন্ধানগুলো হাজার হাজার বছরের আরশোলার ইতিহাস ঘেঁটে জানাচ্ছে এই পতঙ্গকে বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে যার পূর্ণ অবদান রয়েছে সে হল মানুষ।
গবেষকরা ১৭টা দেশ ও ছটা মহাদেশের ২৮০টারও বেশি আরশোলার জিন বিশ্লেষণ করেছেন। তারা নিশ্চিত হয়েছেন, বিশ্বব্যাপী পাওয়া আরশোলার জার্মান প্রজাতি, প্রকৃতপক্ষে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উদ্ভূত হয়েছিল। সম্ভবত ২১০০ বছর আগে এই প্রজাতি এশিয়ান আরশোলা থেকে বিবর্তিত হয়েছিল। এই গবেষণা সোমবার প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকদের মতে আরশোলা দুটো প্রধান পথ দিয়ে বিশ্ব-ভ্রমণ করে। এরা প্রায় ১২০০ বছর আগে মধ্যপ্রাচ্য থেকে পশ্চিমে ভ্রমণ করেছিল, সেক্ষেত্রে সম্ভবত তারা সওয়ার হয়েছিল সৈন্যদের রুটির ঝুড়ি চেপে। বিজ্ঞানীদের পুনর্গঠন এবং ঐতিহাসিক রেকর্ড অনুসারে আরশোলারা ২৭০ বছর আগে ইউরোপে পৌঁছেছিল ডাচ এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য পথ ব্যবহার করে। যথাস্থানে পৌঁছোনোর পরে তাদের নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয়নি। একাজে তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল স্টিম ইঞ্জিন, ইনডোর প্লাম্বিং। আর আরশোলা এসব ব্যবহার করে যেমন নানা স্থানে ভ্রমণ করে নতুন নতুন বাসস্থান পেতে লাগল তেমন বাড়ির ভিতরে নিশ্চিন্ত আরামদায়ক জীবনযাপন করতে লাগল। গবেষকরা বলছেন কীভাবে আরশোলা অতীতে বিভিন্ন পরিবেশ জয় করেছিল তা জানলে এই ধরনের পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের সুবিধা হতে পারে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে কীটপতঙ্গ নিয়ে অধ্যয়নরত পোস্টডক্টরাল গবেষক, কিয়ান ট্যাং-এর মতে, আধুনিক দিনের আরশোলাদের নাশ করা কঠিন কারণ এই প্রাণী কীটনাশক প্রতিরোধ করার জন্য দ্রুত বিবর্তিত হয়।