প্রোটিন আমাদের শরীরের মৌলিক চাহিদা। আমাদের শরীরের কলার বৃদ্ধি, মেরামতের জন্য বা পেশি, অঙ্গ, ত্বক এবং চুলের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, এনজাইম, হরমোন এবং অ্যান্টিবডি তৈরিতে প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুতরাং বিপাকীয় প্রক্রিয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। কিন্তু অত্যধিক প্রোটিন কী কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে?
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সারা বছর ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন। বাইরের খাবারের প্রতি ঝোঁক, জল কম খাওয়া, তেল-মশলাদার খাবারের প্রতি আসক্তি, শরীরচর্চা না করা, ডায়েট— এমন বিভিন্ন কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাসা বাঁধে শরীরে। নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম মেনে না চললে সমস্যা দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদ উভয়েই কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীদের ঘরোয়া খাবার সেই সঙ্গে ফল, শাকসব্জি খাওয়ারও পরামর্শ দেন। হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং অনুসারে আমাদের শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য মাত্র ০.৮ গ্রাম প্রোটিন ধার্য। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে কিছু কিছু ব্যক্তি যেমন ক্রীড়াবিদ বা যারা অসুস্থতা বা আঘাত থেকে সেরে উঠছেন, তাদের বেশি মাত্রায় প্রোটিন গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। অত্যধিক প্রোটিন গ্রহণ করা, বা বলা যায় প্রতি কেজি ওজনের জন্য প্রতি দিনে ২ গ্রামের বেশি প্রোটিন কিডনিতে চাপের সৃষ্টি করে এবং সময়ের সাথে সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার জন্ম দিতে পারে। নিউরোগ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি অ্যান্ড মোটিলিটি জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় খাদ্যতালিকাগত প্রোটিন গ্রহণ এবং কোষ্ঠকাঠিন্য বৃদ্ধির মধ্যে একটি সম্পর্ক পর্যবেক্ষণ করেছেন। প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার, বিশেষ করে প্রাণী-ভিত্তিক প্রোটিন যেমন মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবারে প্রায়শই ফাইবারের পরিমাণ কম থাকে। অন্ত্রের স্বাস্থ্যরক্ষায় ফাইবারের ভূমিকা অনেকখানি। ফল, শাকসব্জি, দানাশস্যে ফাইবার ভরপুর মাত্রায় থাকে। পেট ভরানো ও পেট পরিষ্কার করাই হল ফাইবারের মূল কাজ। শরীরের টক্সিন বার করে দিতেও সাহায্য করে ফাইবার। অত্যধিক প্রোটিন গ্রহণ ও পর্যাপ্ত তরল গ্রহণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় না রাখলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ। কিছু ব্যক্তি প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করার সময় হজমের অস্বস্তি বা পেটে ফাঁপাভাবও অনুভব করতে পারে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। সুতরাং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার সময় কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করার জন্য পর্যাপ্ত হাইড্রেশন এবং ফাইবার গ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সারাদিন প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে হবে, খাবারের মধ্যে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন ফল, শাকসবজি, লেবু এবং দানাশস্য অন্তর্ভুক্ত করলে খাবার হজম সহজ হবে, এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে পারা যাবে। নিয়মিত শরীর চর্চা অন্ত্রের গতিশীলতাকে বাড়িয়ে তোলে এবং অন্ত্রের কার্যকারিতাকেও বৃদ্ধি করে।