আমাদের শরীরের কোশ যখন কাজ করে চলে তখন তারা “ফ্রি র্যাডিকালস” নামে পরিচিত কিছু প্রতিক্রিয়াশীল অণু উৎপাদন করে। এই অস্থির অণুগুলো আমাদের কোশকে ক্ষতি করতে পারে এবং আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্যান্সারের মতো রোগ সৃষ্টি করতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের এই ক্ষতিকারক অণুগুলোর বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক অস্ত্র হিসেবে কাজ করে। কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীর তৈরি করে আবার কিছু— যেমন গাজরের বিটা-ক্যারোটিন, টমেটো থেকে লাইকোপিন এবং আঙুর থেকে পলিফেনল — আমাদের খাবার থেকে শরীরে ঢোকে। সবগুলোই ফ্রি র্যাডিকাল দ্বারা সৃষ্ট কোশের ক্ষতি, বা “অক্সিডেটিভ স্ট্রেস” প্রতিরোধ ও সীমাবদ্ধ করে বলে মনে করা হয়।
কিন্তু বেশি পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ কী আদৌ ভালো?
গবেষণা থেকে জানা যায় যে যাদের খাদ্য তালিকায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সমৃদ্ধ ফল, শাকসবজি এবং লেবু রয়েছে তাদের হার্টের রোগ, ক্যান্সার এবং যেকোনো কারণে তাড়াতাড়ি মৃত্যুর ঝুঁকি কম থাকে। সুতরাং ভাবা যেতে পারে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানো, যেমন, পরিপূরক গ্রহণ করা উপকারী প্রতিপন্ন হবে। কিন্তু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সমৃদ্ধ খাবার না খেয়ে কোনো ব্যক্তি যদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সম্পূরক গ্রহণ করে তবে তা প্রস্তাবিত মাত্রা অতিক্রম করে যেতে পারে যা আসলে ক্ষতিকারক হতে পারে। উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ করার ফলে বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে যা মৃদু থেকে খুব গুরুতর হতে পারে। যেমন, উচ্চ পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন ত্বককে হলুদ বা কমলা করে দেয়, যা খারাপ দেখতে লাগলেও ক্ষতিকর নয়। অত্যধিক ভিটামিন সি গ্রহণের ফলে ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব এবং পেটে ব্যথার মতো হজম সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে। গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে বিটা-ক্যারোটিনের উচ্চ মাত্রা ধূমপায়ীদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। প্রাণী এবং মানুষের কলা নিয়ে গবেষণা থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিছু ক্যান্সারের বৃদ্ধি এবং বিস্তারকে প্রণোদিত করতে পারে। এছাড়াও, উচ্চ-মাত্রায় ভিটামিন ই সম্পূরককে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে দেখা গেছে, যেমন অ্যাসপিরিন, ওয়ারফারিন, ট্যামোক্সিফেন এবং সাইক্লোস্পোরিন এ। এই গবেষণা পরামর্শ দেয় যে, অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের জন্য খারাপ হতে পারে – কিন্তু কেন? কারণ কম পরিমাণে ফ্রি র্যাডিকাল আসলে সহায়ক হতে পারে। গবেষকদের মতে ফ্রি র্যাডিকালের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় উপকারী ভূমিকা রয়েছে। সীমিত মাত্রায় ফ্রি র্যাডিকাল, কোশ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং রোগের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে কাজ করে। তারা ওষুধের বিপাক বা অন্যান্য প্রক্রিয়ায় জড়িত এবং কোশ থেকে কোশ যোগাযোগে অংশগ্রহণ করে। খুব বেশি পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ করা হলে, এই স্বাভাবিক এবং প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াগুলো ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে অবাঞ্ছিত প্রভাব পড়ে। সুতরাং এখন প্রশ্ন হল কীভাবে আমরা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি? আমাদের পরিপূরক এড়িয়ে যেতে হবে এবং একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা তৈরি করতে হবে।