দিনের বেলা ঘুমোনো বেশ কিছু মানুষের কাছে অযথা সময় নষ্ট বা বিলাস আবার কেঊ কেউ এটা সুস্থতা বজায় রাখার উপায় হিসেবে দেখেন। টেক্সাস এএন্ডএম বিশ্ববিদ্যালযয়ের স্টিভেন বেন্ডার, ক্লিনিকাল সহযোগী অধ্যাপক এ বিষয়ে নানা দিক থেকে আলোকপাত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, গবেষণা বলছে যে দিনের বেলা অল্প ঘুমোনোর অনেক উপকারিতা রয়েছে। দিনের বেলা এই ঘুম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পারে, তার সাথে সতর্কতা, মনোযোগ বাড়ে এবং প্রতিক্রিয়ার দ্রুত উন্নতি হয়। সংক্ষিপ্ত ঘুম মানুষের উত্পাদনশীলতা এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে। তাই কিছু কোম্পানি কর্মক্ষেত্রে ঘুমানোর ঘর চালু করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, যে মস্তিষ্ক সারাদিনে সংগৃহীত তথ্য প্রক্রিয়া করার জন্য ঘুমের সময় ব্যবহার করে, যা সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়ায় । একটি ছোট সমীক্ষায় দেখা গেছে যে যারা দিনের বেলা অল্প সময়ের জন্য ঘুমোন তারা কম হতাশ এবং আবেগপ্রবণ, যার ফলে কাজ সম্পাদন করার সময় তারা ভালো মনোনিবেশ এবং দক্ষতা দেখিয়েছেন।
ঘুমানোর ফলে নতুন মোটর দক্ষতা, যেমন নতুন খেলা বা বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শেখার ক্ষমতা উন্নত হতে পারে, কারণ রাতে বা দিনে অল্প ঘুমানোর সময়, এই সংক্রান্ত স্মৃতি বা দক্ষতা মস্তিষ্কে একত্রিত হয়। ঘুম মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রায় ২০ মিনিটের ঘুম অংশগ্রহণকারীদের সামগ্রিক মেজাজকে উন্নত করে। যাইহোক, ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে ঘুমোলে বিরক্তির মেজাজ তৈরি হয়, আর সুস্থতার অনুভূতি কমে। সংক্ষিপ্ত ঘুম কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি হ্রাসের সাথেও যুক্ত হতে পারে। আমরা শরীরের যতটা জাগ্রত থাকার ক্ষমতা, তার চেয়ে বেশি জাগি, তাহলে আমাদের শরীরে “ফাইট বা ফ্লাইট” রাসায়নিক তৈরি হওয়ার প্রবণতা থাকে। গবেষণায় বলে যে সামঞ্জস্যপূর্ণ ঘুম এই রাসায়নিকগুলো কমাতে সাহায্য করে, যার ফলে রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক হয়। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দিনের বেলায় অল্প ঘুম এই প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে বলে মনে করা হয়।
বেন্ডার জানিয়েছেন ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে ঘুমোলে ঘুমের জড়তা কাটতে সময় লাগে, এতে মানুষ বিরক্ত, বিভ্রান্ত বোধ করে। সাধারণত, দিনের বেলা ঘুম যত বেশি হবে, তত বেশি সময় লাগে ঘুমের জড়তা কাটাতে। এটি কয়েক মিনিট থেকে আধা ঘন্টা পর্যন্ত আমাদের জ্ঞানীয় কার্যকারিতাকে নিষ্ক্রিয় করে রাখতে পারে।
তবে দেখা গেছে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের জন্য, ৩০ মিনিটের বেশি দীর্ঘ ঘুম কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন যে বয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন এক ঘণ্টার বেশি ঘুমানোর কারণে উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে শর্করার মাত্রা উচ্চ, কোমরের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বি জমা এবং কোলেস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যায়, যা মেটাবলিক সিনড্রোম নামে পরিচিত। এর কারণ অজানা হলেও দেখা যায় বয়স্ক ব্যক্তিদের অল্পবয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় দিনে বেশি ঘুমানোর প্রবণতা থাকে, কারণ রাতে তাদের একটানা ভালো ঘুম হয়না।
বেন্ডার বলেন, দুপুরে তাড়াতাড়ি মধ্যাহ্নভোজের পরে ঘুমোন, মধ্যাহ্নভোজের পর শক্তির মাত্রা হ্রাস পায়, যা শরীরের প্রাকৃতিক সার্কাডিয়ান রিদমের সাথে যুক্ত। আর দিনে ঘুমানো স্বাস্থ্যকর ঘুমের রুটিনের পরিপূরক হওয়া উচিত, পর্যাপ্ত রাতের বিশ্রামের বিকল্প হিসাবে এটা কাজ করবে না। ভারসাম্যপূর্ণ ঘুম মানুষকে আরও শক্তি দেবে, মনোযোগী বানাবে এবং সুস্থ জীবন দেবে।