মানুষের মতো গাছপালাও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে। আমরা দেখতে না পেলেও গাছপালা এক অদৃশ্য, বায়ুবাহিত যৌগের সূক্ষ্ম কুয়াশা দ্বারা ঢাকা থাকে। এই কুয়াশার চাদর গাছপালাকে যোগাযোগ করতে এবং নিজেদের রক্ষা করতে সাহায্য করে। তৃণভোজীরা ক্ষুধার্ত থাকলেও এই যৌগগুলোর ঘ্রাণ শুঁকে সরে যায়, আর গাছ তার প্রতিবেশী উদ্ভিদকে আগত আততায়ী সম্পর্কে সতর্ক করে। ১৯৮০- এর দশক থেকে বিজ্ঞানীরা কিছু উদ্ভিদের মধ্যে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানেন, তারপর থেকে তারা ৮০ টিরও বেশি উদ্ভিদ প্রজাতিকে শনাক্ত করেছেন। জাপানের একদল গবেষক রিয়েল-টাইম ইমেজিং কৌশল দিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন গাছপালা কীভাবে এই বায়বীয় সংকেত গ্রহণ করে।
জাপানের সাইতামা ইউনিভার্সিটির আণবিক জীববিজ্ঞানীরা যে সব গাছপালা আহত ও পোকামাকড়ে আক্রান্ত, তাদের নির্গত যৌগগুলি আশেপাশের সুস্থ গাছপালার মধ্যে পাম্পের সাহায্যে প্রতিস্থাপন করেছিলেন এবং ফ্লুরোসেন্স মাইক্রোস্কোপ দিয়ে সুস্থ গাছের প্রতিক্রিয়া দেখেন। তারা একটা শুঁয়োপোকা (স্পোডোপ্টেরা লিটুরা) নিয়ে টমেটো গাছ থেকে কাটা পাতা এবং একটা আগাছা, অ্যারাবিডোপসিস থালিয়ানা উপর স্থাপন করেন। এরপর তারা সুস্থ পোকামুক্ত অ্যারাবিডোপসিস-এর সাথে এগুলো যুক্ত করেন। শুঁয়োপোকাওয়ালা গাছ ও পাতার পাঠানো বিপদ সংকেত থেকে দ্বিতীয়, অক্ষত, পোকা-মুক্ত অ্যারাবিডোপসিস উদ্ভিদের প্রতিক্রিয়া চিত্রিত করেছিলেন। সুস্থ অ্যারাবিডোপসিস শুধু এক সাধারণ আগাছা ছিল না, এর জিনগত পরিবর্তন করে তাদের কোশে একটা বায়োসেন্সর লাগানো ছিল, যা ক্যালসিয়ামের অন্তঃপ্রবাহ ঘটলে সবুজ হয়ে জ্বলে। সুস্থ গাছগুলো আহত গাছপালার সংকেত বেশ উচ্চ এবং স্পষ্টভাবে পেয়েছিল, পাতা জুড়ে তারা ক্যালসিয়াম সংকেত বিস্ফোরণ করে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। বায়ুবাহিত যৌগ বিশ্লেষণ করে, গবেষকরা দেখেছেন Z-3-HAL এবং E-2-HAL নামক দুটি যৌগের জন্য অ্যারাবিডোপসিস ক্যালসিয়াম সংকেত দেয়। তারা ফ্লুরোসেন্ট সেন্সর দিয়ে শনাক্ত করেছেন পাতার মধ্যে অবস্থিত মেসোফিল কোশগুলো অ্যারাবিডোপসিস উদ্ভিদের বিপদ সংকেতগুলোতে প্রথম সাড়া দেয়। নেচার কমিউনিকেশন জার্নালে গবেষকরা জানান এই ইথারিয়াল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক, আমাদের চোখের আড়ালে ঘটে, আর এই পদ্ধতি আসন্ন হুমকি থেকে প্রতিবেশী গাছপালা রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।