গবেষকরা শনাক্ত করেছেন যে প্রায় ২০ টা জীবাণু সার্বজনীনভাবে প্রাণীর শরীরের পচনের জন্য দায়ী। কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক জেসিকা মেটকাফ, এই কাজের গবেষক নেচার মাইক্রোবায়োলজি জার্নালে তাদের গবেষণা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, তারা পরিবেশগত গবেষণার এই নতুন ক্ষেত্র উন্মুক্ত করেছেন। জৈবচক্রে যেকোনো জৈববস্তুর পচন একটা স্বাভাবিক ঘটনা। গাছের পচনের বিষয়ে মোটামুটি একটা ধারণা থাকলেও, মেরুদণ্ডী প্রাণী বা মানুষের পচন নিয়ে এত বিশদ তথ্য নেই। ৩৬টা মানব মৃতদেহ নিয়ে বিভিন্ন আবহাওয়ায় ৪টে ঋতুতে তাদের পচন নিয়ে গবেষকরা অধ্যয়ন করেছেন। প্রতি ক্ষেত্রে ২১ দিন পরে মৃতদেহের চামড়া ও মাটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই নমুনা থেকে তারা আণবিক ও জিনগত তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন।
জলবায়ু বা মাটির ধরন নির্বিশেষে, ৩৬ টা দেহেই প্রায় ২০ টা পচনশীল জীবাণুর সমষ্টি খুঁজে পাওয়া গেছে বলে তারা জানিয়েছেন। আশ্চর্যজনকভাবে এই জীবাণুগুলো ঘড়ির কাঁটার মতো ২১ দিনের পর্যবেক্ষণ সময়কালে নির্দিষ্ট সময়ে মৃতদেহে এসে পৌঁছেছিল আর কীটপতঙ্গ তাদের আগমনে মূল ভূমিকা পালন করেছিল। পচনশীল মাইক্রোবায়োম থেকে কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর সময় শনাক্ত করা ফরেনসিক বিজ্ঞানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মেটকাফ এবং হনলুলুর চামিনাড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেনসিক সায়েন্সের অধ্যাপক ডেভিড কার্টার এবং ক্যালিফোর্নিয়া সান দিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর মাইক্রোবায়োম ইনোভেশনের পরিচালক রব নাইট এমন একটা টুল তৈরি করেছেন যা মৃত্যুর সময় সঠিকভাবে জানাতে পারবে, যা পোস্টমর্টেম ইন্টারভাল নামেও পরিচিত। গবেষকরা এই জীবাণু সম্প্রদায় কোথা থেকে এসেছে তা নির্ধারণ করতে গিয়ে দেখেছেন, মাটির মাইক্রোবায়োম বা মানুষের ত্বকে অথবা অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমে এই জীবাণুগুলো ছিল না। তারা মনে করছেন, পোকামাকড় জীবাণুকে নিয়ে আসছে।
এই গবেষণা ফরেনসিক বিজ্ঞানের ভবিষ্যতের জন্য উল্লেখযোগ্য, একজন ব্যক্তির মৃত্যুর সময় নির্ধারণের আরও সুনির্দিষ্ট উপায় তদন্তকারীদের প্রদান করার সম্ভাবনা রয়েছে। মেটকাফ জানিয়েছেন, এর ফলাফল কৃষি ও খাদ্য শিল্পেও প্রয়োগ করা যায়।