জলের মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্য কিছু চিংড়ি জাতীয় প্রাণীর প্রজনন বন্ধ করতে পারে বা বাধা দিতে পারে। একটি গবেষণায় জানা গেছে, ‘চিংড়ির মতো’ প্রাণীদের সফলভাবে প্রজনন করার ক্ষমতা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্লাস্টিকে পাওয়া রাসায়নিকের জন্য বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। জানা গেছে যে সামুদ্রিক অ্যাম্ফিপড ইকিনোগামারাস মেরিনাস নামে পরিচিত প্রাণীরা বিষাক্ত প্লাস্টিকের সংস্পর্শে আসার ফলে তাদের মিলনের আচরণে পরিবর্তন আসে। এখনও পর্যন্ত, প্লাস্টিক দূষণ সংক্রান্ত বেশিরভাগ গবেষণা দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে শুধুমাত্র প্লাস্টিকের মধ্যে কোন জিনিস আবদ্ধ হতে পারে বা প্লাস্টিকের বড়ো কণা খাওয়ার ফলে কী বিপদ ডেকে আনতে পারে তার উপর। পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা একটি ভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন এবং প্লাস্টিকের উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত রাসায়নিকগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করেছেন।
পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ মেরিন সায়েন্সেসের অধ্যাপক অ্যালেক্স ফোর্ড বলেছেন যে এই অসফল প্রজনন আচরণের গুরুতর প্রতিক্রিয়া রয়েছে, শুধুমাত্র পরীক্ষা করা প্রজাতির জন্যই নয়, সামগ্রিকভাবে সারা প্রাণীকুলের জন্য। এই প্রাণীগুলো প্রজননের জন্য জোড়া তৈরি করে। প্লাস্টিকের রাসায়নিকের সংস্পর্শে একবার আসলে, তারা তাদের সঙ্গী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে ফিরে আসতে বেশ সময় নেয় আবার কখনও কখনও একেবারেই ফিরে আসে না। এই প্রাণী সাধারণত ইউরোপীয় উপকূলে পাওয়া যায়, যেখানে তারা মাছ এবং পাখির খাদ্য, তাই যদি এই প্রাণীদের সংখ্যায় পার্থক্য আসে তবে পুরো খাদ্য শৃঙ্খলে এর প্রভাব পড়বে। প্রতিদিনের পণ্যে বিশ্ব জুড়ে প্রায় ৩৫০,০০০ এরও বেশি রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে দশ হাজারের মতো রাসায়নিক প্লাস্টিক উন্নত করতে ব্যবহৃত হয় যেমন প্লাস্টিককে আরও নমনীয় করতে, রঙ যোগ করতে, সূর্যের তাপ থেকে সুরক্ষা দিতে বা প্লাস্টিককে অগ্নিপ্রতিরোধী করতে। এই রাসায়নিকগুলোর প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষের রোগ প্রতিরোধী প্রক্রিয়া, স্নায়ু বা প্রজনন ক্ষমতার জন্য বিষাক্ত বলে পরিচিত। এনভায়রনমেন্টাল পলিউশন জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় প্লাস্টিকের চারটি বহুল ব্যবহৃত রাসায়নিক পরীক্ষা করা হয়েছে। প্লাস্টিকে ব্যবহৃত সংযোজনগুলো বিভিন্ন সাধারণ পণ্যে ব্যবহৃত হয়, যেমন চিকিৎসা ক্ষেত্রে, খাদ্য প্যাকেজিং এবং খেলনাতে। পরীক্ষায় দেখা গেছে প্লাস্টিকে সংযোজন হিসেবে ব্যবহৃত অনেক রাসায়নিক প্রাণীদের জোড়া তৈরি করার ক্ষমতা হ্রাস করে। যারা জোড়া তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে তাদের যোগাযোগ করতে এবং পুনরায় জোড়া তৈরির ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগছে। দুটি রাসায়নিক পদার্থ চিংড়ির শুক্রাণুর উপর ঘনত্ব-নির্ভর প্রভাব সৃষ্টি করে, যার ফলে রাসায়নিকের উচ্চ মাত্রার সংস্পর্শে আসা শুক্রাণুর সংখ্যা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। গবেষকরা ব্যাখ্যা করেন যে যদিও পরীক্ষিত প্রাণীর ক্ষেত্রে এই রাসায়নিকের ঘনত্ব অনেক বেশি কিন্তু এটা স্পষ্ট যে পরিবেশে এই রাসায়নিকের সংস্পর্শে এসে চিংড়ি জাতীয় প্রাণীদের শুক্রাণুর সংখ্যাকে প্রভাবিত করতে পারে। তাদের মতে এই রাসায়নিকগুলো সম্পর্কে আরও অধ্যয়ন প্রয়োজন এবং বুঝতে হবে তারা কীভাবে বিভিন্ন ধরনের আচরণ যেমন খাদ্য গ্রহণ, লড়াই করা বা পালানো অথবা প্রজনন ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাকেও কমিয়ে দিতে পারে। তাই গবেষকরা বিশ্বজুড়ে পরিবেশ সংস্থাকে আচরণগত তথ্যে সরবরাহের উপর গুরুত্ব আরোপ করতে বলছে কারণ কখনও কখনও এই তথ্য এমন কিছু তুলে ধরে যা স্বাভাবিক বিষাক্ততার পরীক্ষায় দেখা যায় না। এই ধরনের অধ্যয়ন একটি নির্দিষ্ট দূষণকারী দ্বারা সৃষ্ট সম্ভাব্য ক্ষতি সম্পর্কে একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়।