প্রাচীন সভ্যতার লিখিত নথি থেকে আমরা কী জানতে পারি? কনভারসেশন-এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হচ্ছে, একটি মিশরীয় প্যাপিরাসের প্রাচীন নথিতে সেই অঞ্চলের বিষাক্ত সাপের বিষয়ে নানা তথ্য আছে। সেই সময়ে ফারাওদের দেশে রাজত্ব করত নানা বৈচিত্র্যময় সাপ, সেই কারণে মিশরীয় লেখকরা সাপ ও সাপের কামড়ের চিকিৎসা নিয়ে নানা কথা লিখে গেছেন।
গুহাচিত্রের মতো, ইতিহাসের প্রথম দিকের নথির পাঠগুলিতে লেখকরা প্রায়শই বন্য প্রাণীদের বর্ণনা দিয়েছেন। তাদের লেখায় কিছু উল্লেখযোগ্য বিবরণ উঠে আসে, কিন্তু কী ধরনের প্রজাতির কথা তারা বলেছেন তা শনাক্ত করা বেশ কঠিন। যেমন, ব্রুকলিন প্যাপিরাস নামক প্রাচীন মিশরীয় নথি, যা প্রায় ৬৬০- ৩৩০ ক্রিস্টপূর্ব সময়কালের এক পুরানো নথি, সেই সময়ে পরিচিত বিভিন্ন ধরণের সাপ, তাদের কামড়ের ফলে প্রভাব এবং তাদের চিকিত্সার তালিকা দিয়েছে। উল্লেখযোগ্য হল সাপের কামড়ের লক্ষণের পাশাপাশি, প্যাপিরাসে সাপের সাথে যুক্ত দেবতাকেও বর্ণনা করা হয়েছে, যে দেবতার হস্তক্ষেপ এই সাপে কামড়ানো রোগীকে বাঁচাতে পারে। যেমন “অ্যাপোফিসের মহান সাপ”, নথি অনুযায়ী একজন দেবতা যিনি একটি সাপের রূপ নিয়েছিলেন, তার কামড়ে দ্রুত মৃত্যুর কথা বর্ণনা করা হয়েছে। পাঠকদের সতর্ক করা হয়েছিল যে এই সাপের দুটি বিষদাঁতের পরিবর্তে চারটি বিষদাঁত ছিল, যা বর্তমানেও সাপের একটি বিরল বৈশিষ্ট্য।
ব্রুকলিন প্যাপিরাসে বর্ণিত বিষধর সাপগুলি বৈচিত্র্যময়, ৩৭টি প্রজাতির সাপের তালিকা দেওয়া হয়েছে যার মধ্যে ১৩টির বর্ণনা পাওয়া যায়না। আজ, প্রাচীন মিশরের এলাকা খুব কম প্রজাতির সাপের আবাসস্থল। তবে চারটি বিষদাঁতওয়ালা অ্যাপোফিস কোন প্রজাতির সাপ তা গবেষকদের মধ্যে অনেক জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে। যে সাপের চারটি বিষদাঁত থাকে তা হল সাব-সাহারান আফ্রিকান সাভানার বুমস্ল্যাং (ডিসোফোলিডাস টাইপাস), এদের এখন বর্তমান মিশরের দক্ষিণে ৪০০মাইলেরও বেশি দূরে পাওয়া যায়। এর বিষ আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে রক্তপাত ঘটাতে পারে যাতে প্রাণঘাতী মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণও ঘটে।
আমাদের অধ্যয়ন দেখায় যে প্রাচীন মিশরের অনেক বেশি আর্দ্র জলবায়ু এমন অনেক সাপকে সমর্থন করত যেগুলি আজ সেখানে বাস করে না। গবেষকদের অধ্যয়ন দেখায় যে আধুনিক প্রযুক্তির সাথে প্রাচীন গ্রন্থগুলিকে একত্রিত করলে তা কতটা আমাদের আলোকিত করতে পারে। এমনকি কাল্পনিক প্রাচীন বর্ণনাও অত্যন্ত তথ্যপূর্ণ হতে পারে। আধুনিক প্রজাতিকে প্রাচীন পরিসরের মডেলিং-এ ফেলে পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে আমাদের পূর্বপুরুষদের বাস্তুতন্ত্র কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল সে সম্পর্কে আমাদের অনেক কিছু জানায়, যা আশেপাশের বন্যপ্রাণীর সাথে মানুষের মিথস্ক্রিয়ার প্রভাব বুঝতে সাহায্য করে।