অপরাধী ধরতে ফরেনসিকে অন্যতম উল্লেখযোগ্য প্রমাণ হল আঙুলের ছাপ, যা অপরাধী শনাক্ত করার কার্যকর হাতিয়ার। এতদিন বলা হত একজন ব্যক্তির হাতের প্রতিটি আঙুলের ছাপ আলাদা আলাদা। কিন্তু কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় এই তত্ত্বটির বিপক্ষে যুক্তি খাড়া করে হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণ করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রোগ্রাম তৈরি করেছেন। তাতে ৬০০০০ আঙ্গুলের ছাপ বিশ্লেষণ করে নির্ধারণ করার চেষ্টা করা হয়েছে কোন ছাপগুলি একই ব্যক্তির। গবেষকদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সিস্টেমটি আঙুলের ছাপ থেকে ৭৫-৯০ শতাংশ নির্ভুলতার সাথে নির্ধারণ করতে পারছে যে কোন ছাপগুলি এক একজন ব্যক্তির।
কলম্বিয়ার কম্পিউটার সায়েন্স প্রোগ্রামের একজন স্নাতক ছাত্র গ্যাবে গুয়া, এই বিষয়ে গবেষণা দলের তত্ত্বাবধান করেছেন, তার সাথে বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়েনিয়াও জু কাজ করছেন। সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন আঙুলের ছাপ সম্পর্কে একটি দীর্ঘ-স্বীকৃত ধারণাকে উলটে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল ব্যবহার করেছেন যা কনট্রাস্টিভ নেটওয়ার্ক হিসাবে পরিচিত, এটি মুখ শনাক্তকরণের মতো কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। কনট্রাস্টিভ লার্নিং হল এমন একটি দৃষ্টিশক্তির কার্যকারিতা কৌশল যা বিভিন্ন তথ্যের মধ্যে সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো ও তথ্যের মধ্যে পার্থক্যগুলো বুঝে এক ধরনের তথ্য থেকে অন্য ধরনের তথ্য আলাদা করে। গবেষকরা মার্কিন সরকারের তথ্যভাণ্ডার থেকে জোড়ায় জোড়ায় ডেটা এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেলে দেন, যার মধ্যে কিছু তথ্য একই ব্যক্তির হলেও, তাদের ভিন্ন আঙুলের ছাপ দেওয়া হয়েছিল এবং বিভিন্ন ব্যক্তির আলাদা আলাদা আঙুলের ছাপের তথ্য দেওয়া হয়েছিল। তখন দেখা যায়, একই ব্যক্তির বিভিন্ন আঙুলের ছাপে যথেষ্ট সাদৃশ্য থাকে। ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একজন ব্যক্তির বিভিন্ন আঙুলের ছাপ শনাক্ত করতে পেরেছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আঙুলের ছাপগুলিকে প্রচলিত কৌশলের চেয়ে ভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করে, আঙুলের মাঝখানের উঁচু নিচু খাঁজ, তার দিকের ওপর জোর দেয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে আঙুলের খাঁজ কোথায় থামছে বা বিভক্ত হচ্ছে তার ওপর জোর দেওয়া হত। প্রচলিত পদ্ধতি আঙুলের ছাপ মেলানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট কার্যকর, কিন্তু একই ব্যক্তির বিভিন্ন আঙুলের ছাপের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য নয়। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই বিষয়ে আরও বিভিন্ন ধরনের আঙুলের ছাপের তথ্য নিয়ে কাজ করে তবে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার টুলটি ফরেনসিকে কাজে লাগানো যাবে। যে সমস্ত ক্ষেত্রে আলাদা আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং সেই কেসে তা দিয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, সেখানে এই টুল ব্যবহার করে সফল হওয়া সম্ভব। গবেষকদের আশা এই টুল নির্দোষ ব্যক্তিদের হেনস্থাও রোধ করবে।