সম্প্রতি, কর্ণাটকে কয়েকটি হাতির মৃত্যু হয়েছে আর মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডিহাইড্রেশনকে দায়ী করা হয়েছে। হাতিদের এই মৃত্যু সোশ্যাল মিডিয়ার যথেষ্ট মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এই বছর, কর্ণাটক তীব্র গ্রীষ্মের সম্মুখীন হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুকনো বনভূমি, শুকিয়ে যাওয়া জলের গর্তের ছবি ছাপা হচ্ছে, জঙ্গলের পশুদের জলের অভাবে কি হতে পারে তা নিয়ে প্রচুর আলোচনা চলছে। সরকার ট্যাঙ্কার এবং অন্যান্য কৃত্রিম উপায় ব্যবহার করে বন্যপ্রাণী এলাকায় জলের গর্ত জল দিয়ে ভরার ব্যবস্থা নিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নিয়ে নানা চর্চা। সকলের বক্তব্য বন্য প্রাণীদের বাঁচার জন্য আমাদের সাহায্য ভীষণভাবে দরকার।
প্রকৃতি প্রাচুর্য এবং সংকটের চক্রের মধ্য দিয়ে যায়। এই উভয়েরই বাস্তুতন্ত্র এবং প্রাণীদের উপর ইতিবাচক প্রভাব থাকে। গত কয়েক বছরে, সংরক্ষিত এলাকার অভ্যন্তরে অনেক ট্যাঙ্ক এবং হ্রদ বোরহোলের জল দিয়ে পাম্প করা হয়েছে, যার ফলে আশেপাশের অন্যান্য ট্যাঙ্ক এবং হ্রদ সহ একটা বিস্তৃত অঞ্চলে জলের প্রাপ্তি প্রভাবিত হয়েছে যার কুফল নানা জলজ প্রাণীর ওপরে এসে পড়া স্বাভাবিক। হাতিরা হল ডাঙ্গার এমন ইঞ্জিনিয়ার যারা তাদের আবাসস্থলের বাস্তুতন্ত্রের জটিল জালকে একত্রে আবদ্ধ করে। হাতিরা যেখানে দিয়েই চলে যাক তা সেই অঞ্চলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। হাতিরা যখন ফলের জন্য বিস্তীর্ণ এলাকা তছনছ করে গাছের ডাল ভাঙে, সেই এলাকা তৃণভূমিতে ভরে যায়, যা তৃণভোজীদের চারণভূমিতে পরিণত হয়। এমন কি তারা গাছপালা উপড়ে ফেলে নতুন চারাগাছ গজানোর সু্যোগ করে দেয়। তারা জল বা খাদ্যের সন্ধানে সারা বছর ধরে অনেকটা দূরত্ব অতিক্রম করতে থাকে আর তাদের চলার পথে, বিস্তৃত পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব তৈরি করে। কিন্তু যদি আমরা হাতিদের কৃত্রিমভাবে জল সরবরাহ করে একটি ছোট এলাকায় সীমাবদ্ধ করি, তাহলে পরিবেশের বাস্তুতন্ত্রে তাদের ইতিবাচক প্রভাব যেমন কমবে, সেরকম ছোটো এলাকায় তাদের বারবার যাতায়াতের ফলে পায়ের চাপে সেই এলাকার বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে।
হাতির শত্রু হিসেবে এমন কোনো প্রাণী নেই যে তাকে মেরে ফেলতে পারে। শুধুমাত্র হাতির বাচ্চাকে বাঘ শিকার করতে পারে। তাই হাতির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকৃতি তার নিজের মতো করে। প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ অনুযায়ী খাদ্য বা জলের খোঁজে পাড়ি দেওয়ার সময় দুর্বল হাতি বা হাতির কিছু বাচ্চার মৃত্যু হয়, আর তাতে তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত হয়। আমরা ঈশ্বর হিসেবে তাদের খাদ্য জল পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করে নির্দিষ্ট অঞ্চলে আটকে রেখে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি, বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করে পরিবেশ নষ্টের দিকে এগিয়ে যাব।