খুব সাধারণ এক পতঙ্গ ফড়িং, যে পোকা ঘাস, গুল্ম বা গাছ থেকে উদ্ভিদের রস চুষে খায়। তাদের পিছনের পা লাফানোর জন্য পরিবর্তিত হয়েছে। এই সাধারণ পোকা নিজেকে এমন এক আবরণে লুকিয়ে রাখতে পারে যাতে তাকে দেখা যায়না। ফড়িঙের রেচন অঙ্গ ম্যালফিজিয়ান টিউবুলস থেকে নিঃসৃত এক ধরনের প্রোটিন ক্ষরণ দিয়ে এই আবরণ তৈরি হয়। ব্রোকোসোম নামে এই ক্ষুদ্র কণা দৃশ্যমান এবং অতিবেগুনী আলো উভয়ই শোষণ করে। প্রকৃতি ফাঁপা কণা ব্যবহার করে এভাবে একটা নির্দিষ্ট উপায়ে আলো নিয়ন্ত্রণ করে। ফড়িংরা ব্রোকোসোম দিয়ে নিজেদের আবৃত করে দূষণ ও জল থেকে নিজেদের রক্ষা করে। গবেষকদের মতে শিকারীদের থেকে রক্ষা পেতে তারা এই আবরণ তৈরি করে।
গবেষকরা দেখেছেন যে ব্রোকোসোমের গর্তের আকার সমস্ত ফড়িং নির্বিশেষে ৬০০ ন্যানোমিটার ব্যাসযুক্ত হয়। যাতে এটা ফাঁপা, সকার বলের মতো চেহারা পায়। ব্রোকোসোমগুলো একটা ব্যাকটেরিয়ামের প্রায় অর্ধেক – এবং ব্রোকোসোমের ছিদ্রগুলো প্রায় ২০০ ন্যানোমিটার। ব্রোকোসমের এই অনন্য নকশার পেছনে কারণ আবিষ্কার করতে গিয়ে গবেষকরা দেখেছেন যে ব্রোকোসোমের নকশার দ্বৈত উদ্দেশ্য আছে, তা অতিবেগুনী আলো শোষণ করে, যাতে তাদের পাখি এবং সরীসৃপের মতো শিকারী প্রাণীদের কাছে দৃশ্যমানতা হ্রাস পায়। আর এর থেকে দৃশ্যমান আলো ছড়িয়ে পড়ে সম্ভাব্য ঝুঁকির বিরুদ্ধে প্রতিবিম্ব বিরোধী ঢাল তৈরি করে। ব্রোকোসমের গর্তের আকারগুলো অতিবেগুনী আলো শোষণের জন্য উপযুক্ত।
ল্যাবে উচ্চ প্রযুক্তির ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং পদ্ধতি ব্যবহার করে মেক্যানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিঙয়ের লিন ওয়াং এই ব্রোকোসোমগুলি তৈরি করেন। তারা ২০০০০ ন্যানোমিটার বা মানুষের চুলের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ব্যাসের সংস্করণ মুদ্রণ করেছিলেন। এই ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং-এ ছিদ্রের সংখ্যা, আকৃতি এবং অঙ্গসংস্থানের সঠিক প্রতিলিপি তারা তৈরি করতে পেরেছেন। তারা দেখেছেন এই ল্যাব-নির্মিত কণাগুলি ৯৪% পর্যন্ত আলোর প্রতিফলন কমাতে পারে। কৃত্রিম ব্রোকোসোম ব্যবহার করে দক্ষ সৌর শক্তি সংগ্রহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এই কৃত্রিম আবরণ ওষুধকে আলো থেকে হওয়া ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে, সূর্যের আলো থেকে হওয়া ত্বকের ক্ষতিতে সুরক্ষার দেওয়ার জন্য উন্নত সানস্ক্রিনও হতে পারে। এই গবেষণা প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশানাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে।