উষ্ণায়ন ও দ্রুত হারে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মহাসাগরের তাপমাত্রা আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়ে চলেছে। সভ্যতার নানা কর্মকাণ্ডে বাতাসে যে পরিমাণে বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস মিশছে, তার এক-তৃতীয়াংশই মহাসাগরগুলো শুষে নিচ্ছে। তার ফলে, সেখানকার জল আরও বেশি পরিমাণে লবণাক্ত হয়ে উঠছে। যার পরিণতিতে এক-চতুর্থাংশ সামুদ্রিক প্রাণীর বাসস্থান যেখানে সাগর, মহাসাগরের সেই প্রবাল প্রাচীরগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য প্রজাতির মাছের মৃত্যু হচ্ছে।
ইউমাস আমহার্স্টের গবেষক জোশুয়া লোনথায়ার বলেছেন যে শুধু মাছ নয় বহু প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীদের শরীরের আকার উষ্ণ তাপমাত্রার প্রভাবে ছোটো হয়ে যাচ্ছে । বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় একে বলে টেম্পারেচার সাইজ রুল। বেশ কয়েক দশক ধরে এ নিয়ে গবেষণা সত্ত্বেও, এখনও জানা যায়নি কেন তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে কেন আকার হ্রাস পায়। সামুদ্রিক এবং স্বাদুপানির মাছ, উভয় প্রজাতিতে, ক্রমবর্ধমান জলের তাপমাত্রা মাছেদের শুধু বিপাক প্রক্রিয়া, প্রজনন এবং অন্যান্য কাজকর্মে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে তাই নয় তাদের আকারে ছোটো করে তোলে। গিল অক্সিজেন লিমিটেশন (জিওএল) নামে একটি তত্ত্ব অনুসারে মাছের বৃদ্ধি নির্ভর করে মাছের ফুলকা পারিপার্শ্বিক জল থেকে কতটা অক্সিজেন শোষণ করতে পারে তার উপর। জল উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে মাছের জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলো ত্বরান্বিত হয় এবং আরও অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। জিওএল অনুযায়ী মাছের ফুলকার সীমিত পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল থাকে আর তাই তারা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। ফলত উষ্ণ জলে মাছ ততটা বাড়তে পারে না। অতএব, মাছেদের ফুলকা যতটা অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে মাছ ততটাই বৃদ্ধি পেতে পারে। এরপর লোনথায়ার, কমোরোস্কে এবং তাদের সহকর্মীরা দেখতে চেয়েছিলেন কীভাবে জিওএল-এর তিনটি মূল উপাদান—বৃদ্ধি, শক্তির চাহিদা এবং মাছের ফুলকার পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল — জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। গবেষণায় এক থেকে দু গ্রাম ওজনের ছোটো মাছেদের জলের ট্যাঙ্কে রাখা হয়েছিল, যার মধ্যে কিছুতে স্বাভাবিক তাপমাত্রার বা ১৫º সেলসিয়াস জল ছিল এবং অন্যগুলোর মধ্যে ২০º সেলসিয়াস তাপমাত্রার উষ্ণ জল ছিল৷ পরীক্ষার শুরুতে মাছের ওজন এবং আকার পরিমাপ করা হয়েছিল, এবং তারপরে মাসে মাসে তা দেখা হয়েছিল। তাদের অক্সিজেন ব্যবহারের মাত্রাও দু সপ্তাহ, তিন মাস এবং ছয় মাসে পরিমাপ করা হয়েছিল, এবং এটি বিপাকীয় হার নিশ্চিত করার একটি উপায়। সবশেষে, গবেষকরা তাদের ফুলকার পৃষ্ঠের আকার পরিবর্তন পরিমাপ করতে একই মাছ থেকে ফুলকার নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। গবেষণায় দেখা যায় উষ্ণ জলের ট্যাঙ্কের মাছের আকার ছোটো ছিল কিন্তু ফুলকা পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল মাছের শক্তি চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট ছিল, যার অর্থ হল তাদের বৃদ্ধি, ফুলকার পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল দ্বারা সীমাবদ্ধ ছিল না। অর্থাৎ জিওএল যা বলেছে তা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। তদুপরি, গবেষক দল দেখেছিলেন যে উষ্ণ জলের ট্যাঙ্কের মাছের বিপাকীয় হার তিন মাসে বৃদ্ধি পেলেও, ছয় মাসের মধ্যে তাদের অক্সিজেনের হার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, অর্থাৎ মাছেরা জলের বর্ধিত তাপমাত্রা পরিপ্রেক্ষিতে সময়ের সাথে সাথে তাদের শারীরিক ক্রিয়াকলাপকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
তবে মাছের আকার এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার প্রক্রিয়া কী?
গবেষকদের মতে বিষয়টি আজও অজানা। এবং এর কারণে কোনো একক প্রক্রিয়া নেই- অক্সিজেন ব্যবহার সহ আরও অন্যান্য কারণও থাকতে পারে। তাই তাদের মত এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।