আন্টার্কটিকা নিয়ে ঔৎসুক্যের শেষ নেই। প্রতিবছর প্রায় ৬০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেন আন্টার্কটিকায়। ভ্রমণকারীরা যাতে কেবল চোখের মনের আশ মেটানোর উর্দ্ধে উঠে বিজ্ঞান গবেষণায় সহায়ক হয়ে ওঠেন সেব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
পর্যটকদের একটি ভ্রমণতরী রোল্ড অ্যামুন্ডসন। এই জাহাজটি ব্যাটারিতে চলে। এই জাহাজের ভেতরে বর্তমানে আছে একটি গবেষণাকেন্দ্র। আর নিচের ডেকে রাখা যন্ত্রপাতির সাহায্যে চারদিকের জল পরীক্ষা করা যায়। এই জাহাজে প্রথম যে বিজ্ঞানী আন্টার্কটিকায় আসেন তিনি ‘ভার্নাডস্কি গবেষণা কেন্দ্রের’ বিজ্ঞানী অ্যালেক্সান্ডার কোলোসকোভ। তিনিই মূলত ভাবতে চান কীভাবে জাহাজটিকে বিজ্ঞানের কাজে লাগানো যায়। তিনি এমন পরিকল্পনা করতে চাইলেন যেখানে পর্যটকদের আন্টার্কটিকা সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য দেওয়া হবে কেবল এমন নয়, বরং পর্যটকরাও যাতে বিজ্ঞান গবেষণায় সহায়ক হয়ে ওঠেন।
এরকম আর এক বিজ্ঞানী প্রফেসর আলিয়া খান যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশানাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের’ অর্থানুকূল্যে আন্টার্কটিকায় বরফে জন্মানো শৈবাল নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন বর্তমানে। কিন্তু গবেষণার জন্যে টানা ৫ বছর তিনি আন্টার্কটিকায় থাকতে পারবেন না। তাই মূলত ভ্রমণ অভিযাত্রীদের সাথে এসেই এই কাজটি করেন তিনি। আলিয়া অ্যামুণ্ডসন জাহাজে এসে তথ্য সংগ্রহ করেন, মাইক্রোস্কোপ ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা ব্যবহার করেন, পাশাপাশি পর্যটকদেরও দেখান কীভাবে নমুনা সংগ্রহ করছেন। অর্থাৎ পর্যটকদের মধ্যে থেকে বিজ্ঞান সমন্বয়কারী গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলে। এমনই এক বিজ্ঞান সমন্বয়কারী জো ওয়াকার বলেন, আন্টার্কটিকায় আসতে খরচ অনেক, অনেক আয়োজন করে আসতে হয়। তাই নাগরিকদের বিজ্ঞানের কাজে সম্পৃক্ত করা গেলে যারা এখানে আসেন, তারা একই ঋতুতে একই জায়গা থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে পারেন একাধিক বছরে।
উল্লেখ্য রোল্ড অ্যামুন্ডসন জাহাজের বেশিরভাগ নাবিকই বিজ্ঞানী। তারা যাত্রীদের জন্যে বিভিন্ন বিজ্ঞান প্রকল্প চালান। যেমন, জলে থাকা আণুবীক্ষণিক ফাইটোপ্ল্যাংকটন পরীক্ষার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব জানা যায়। আবার যে সমস্ত গবেষক আন্টার্কটিকায় যেতে পারছেন না, তাদের জন্যে জলের নমুনাও নিয়ে যান পর্যটকরা।
তবে বিজ্ঞানীদের মুখ্য চাওয়া এই যে পর্যটকরা ফিরে গিয়ে চারপাশের মানুষের কাছে পরিবেশ সম্পর্কে ব্যক্তি মানুষের দ্বায়িত্বের কথাটুকু যেন জানান। যাতে আন্টার্কটিকা সহ গোটা পৃথিবীতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে।