পরীক্ষার হল অনেক ছাত্রছাত্রীর কাছে বিরক্তিকর একঘেয়ে জায়গা, তার ওপর থাকে ভালো ফল করার চাপ, কিন্তু এই বিরক্তি একঘেয়েমি তাদের ভালো ফল করার পথে অন্তরায় হয়ে ওঠে। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির ১৮২০ জন জার্মান ছাত্রছাত্রীর ওপর প্রথমবার এ বিষয়ে সমীক্ষা করেছেন। ফলাফলগুলির পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ থেকে দেখা গেছে যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র- ছাত্রীদের মধ্যে পরীক্ষার সময় একঘেয়েমি দেখা যায়। দেখা গেছে পরীক্ষা ছাত্র- ছাত্রীদের কাছে বিশেষ প্রাসঙ্গিক না হলে পরীক্ষার ফলাফলের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। গবেষকরা ‘অ্যাবানডান্স হাইপোথেসিস’ প্রস্তাবনা করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা খুব কঠিন বা খুব সহজ প্রশ্নের সম্মুখীন হলে তাদের মধ্যে একঘেয়েমি এসে যায়।
ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী টমাস গোটজ বলেছেন পরীক্ষার একঘেয়েমি মোকাবিলা করার জন্য, শিক্ষকদের উচিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো এমনভাবে প্রস্তুত করা যা শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের সাথে সম্পর্কিত। আর প্রশ্নগুলো যেন অতিরিক্ত সহজ বা অধিক কঠিন না হয় তাও খেয়াল রাখা দরকার। অ্যাবানডান্স হাইপোথেসিস অনুযায়ী যদি ছাত্র-ছাত্রীদের খুব সহজ প্রশ্ন দেওয়া হয়, তাহলে তাদের একঘেয়েমি লাগলেও তাদের পরীক্ষার ফলাফল বিশেষ খারাপ হয় না। কিন্তু প্রশ্ন যদি বেশ কঠিন হয়, সেক্ষেত্রে তাদের মানসিক একঘেয়েমি থেকে পরীক্ষার মান বেশ খারাপ হয়। এর আগে শ্রেণিকক্ষে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একঘেয়েমি আসা প্রসঙ্গে গবেষকরা শিক্ষক ও অভিভাবকদের শিশুদের সাথে কথা আলোচনা করতে বলেছিলেন, যে শ্রেণির কাজ তাদের কাছে কখন কঠিন লাগে বা কখন সহজ মনে হয়। আগের গবেষণায় কন্ট্রোল ভ্যালু থিয়োরি অফ অ্যাচিভমেন্ট ইমোশানস বা কৃতিত্বের আবেগের নিয়ন্ত্রণ – মূল্য তত্ত্ব এই গবেষনার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। এই তত্ত্ব অনুযায়ী সফলতা এবং ব্যর্থতা নিজের তৈরি করা বলে মনে হয়, ভালো ফল শিশুর গর্ব এবং খারাপ ফল লজ্জা এই আত্ম-আবেগকে জাগায়। বিশেষত একাডেমিক পারফরম্যান্সের উপর ছাত্র-ছাত্রীর নিজের নিয়ন্ত্রণ এবং পড়াশোনার কাজ যে গুরুত্বপূর্ণ তার মূল্য উপলব্ধি প্রয়োজন। গবেষকরা জানিয়েছেন প্রচুর গবেষণায় দেখা গেছে একঘেয়েমি শেখা বা কর্মক্ষমতার ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে পাশাপাশি মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। গবেষণাটি জার্নাল অফ এডুকেশনাল সাইকোলজিতে প্রকাশিত হয়েছে।