ঘুমের ঘোরে অনেকেই সশব্দে নাক ডাকেন। পাশের লোকের নাক ডাকার গর্জনে অনেকরই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ক্ষেত্র বিশেষে নাক ডাকার আওয়াজ এমন তীব্র হয় যে, তার চোটে নিজেই অনেক সময় হয়তো আঁতকে উঠছেন। নাকের গঠনে কোনও সমস্যা থাকলে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। ঘুমোলে নাকে আওয়াজও হয়। এ ছাড়াও মুখের ভিতরের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়লেও ঘুমের সময় নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে।
কিন্তু মানুষ কী সত্যি নিজের নাক ডাকার আওয়াজ শুনতে পায়? আমরা কী পারি আমাদের নাক ডাকার আওয়াজ বা গর্জনকে নিয়ন্ত্রণ করতে? মজার ব্যাপার হল, দুটোই সত্য। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লিপ মেডিসিন এবং নিউরোলজির ক্লিনিকাল অধ্যাপক ডাঃ অনিতা শেলগিকারের মতে কিছু কিছু ব্যক্তি নিজেদের নাক ডাকার শব্দে জেগে ওঠে। আবার কেউ কেউ আছেন যারা তাদের নাক ডাকার তীব্রতা বা দ্রুততা নির্বিশেষে তাদের নাক ডাকার বিষয়ে অবগত নয়। এর কারণ হল
আমাদের প্রত্যেকেরই ঘুম থেকে জেগে ওঠার প্রবণতা ভিন্নভিন্ন থাকে, কারোর অল্পতেই ঘুম ভেঙে যায় আবার কেউ কেউ শত আওয়াজেও ঘুম থেকে ওঠে না। এরাউজাল থ্রেশহোল্ড ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। তবে একজন ব্যক্তি তার নিজের নাক ডাকার আওয়াজে রাতের বেলায় জেগে উঠবে কিনা তা নির্দিষ্ট থাকে না। ঘুমের উপর আওয়াজের প্রভাব নির্ভর করে বেশ কিছু কারণের উপর যেমন- আওয়াজ বা শব্দের পরিমাণ, শব্দের ধরন, ব্যক্তির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং এমন কিছু পরিবেশগত কারণ যা ঘুমকে প্রভাবিত করতে পারে। কিন্তু মানুষকে ঘুম থেকে জাগানোর ক্ষেত্রে শব্দের ভূমিকা খুব সহজ নয়, বিশেষ করে নাক ডাকার ক্ষেত্রে। সাম্প্রতিক গবেষণায় ‘ফেজ-লকড অ্যাকোস্টিক স্টিমুলেশন’ নামে একটি পদ্ধতির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যা নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে শব্দ ব্যবহার করে গভীর ঘুমকে আরও গভীরতর করে। আরেকটি সম্ভব্য কারণ হল যে ব্যক্তি নাক ডাকছে সে র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা REM স্তর বা ঘুমের নির্দিষ্ট পর্যায়ে যখন মানুষ স্বপ্ন দেখে সেই স্তরে রয়েছে কিনা। কিছু তথ্য অনুসারে REM ঘুমের সময় এরাউজাল থ্রেশহোল্ড NREM (নন-REM) ঘুমের তুলনায় কম থাকে। অনেক ব্যক্তি REM ঘুমের স্তরে বেশি নাক ডাকে। সুতরাং REM ঘুমের সময় তাদের নিজের নাক ডাকার আওয়াজ শুনতে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি হতে পারে।
নাক বা মুখ দিয়ে যখন বাতাস সঠিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে না তখন কোনো ব্যক্তি নাক ডাকে। চিকিৎসকদের মতে, শরীরচর্চার প্রতি অনীহা, জীবনযাপনে অনিয়ম ও অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার প্রবণতা ঘুমের ঘোরে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা ছাড়াও নাক ডাকার অন্য একটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। তা হল ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’। অনেকেই মনে করেন, নাক ডাকা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়, তবে এই উপসর্গকে দিনের পর দিন অবহেলা করা অনুচিত। গবেষকদের মতে, যদি কেউ স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো অবস্থার কারণে নাক ডাকে, তবে এটি তাদের স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। সুতরাং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে অবিলম্বে।