১৯২৮ সালে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের সাথে সাথে মানব জাতির ইতিহাসে এক বিশাল পরিবর্তন আসে। পেনিসিলিন আবিষ্কারের আগে সংক্রামক রোগ যেমন নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা এবং সেপসিস ব্যাপক এবং প্রাণঘাতী ছিল। অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি সম্পন্ন অস্ত্রোপচারের পদ্ধতিগুলো ধীরে ধীরে নিরাপদ এবং আরও নিয়মিত হয়ে ওঠে। বিজ্ঞানের দুনিয়ায় অ্যান্টিবায়োটিকের আবিষ্কার যেন বিজ্ঞানের জয়যাত্রার সূচক কারণ চিকিৎসাশাস্ত্র উন্নত হয়েছে এবং অগণিত জীবন বেঁচে গেছে। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের বেশ কিছু অন্তর্নিহিত সতর্কতা রয়েছে। অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে ব্যাকটেরিয়া ওষুধগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুসারে ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে ১.২৭ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে কারণ অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে এবং আগামী বছরেও বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি ক্রমবর্ধমান হুমকির কারণ হয়ে উঠবে। নতুন আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সাহায্য করছে। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রায় এক চতুর্থাংশ ওষুধ যা সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক হিসাবে নির্ধারিত নয়, যেমন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং মানসিক অবসাদ চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত কিছু ওষুধের নির্ধারিত মাত্রায় ব্যবহার মানুষের শরীরে ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে সাহায্য করে।
এই নির্দিষ্ট ওষুধ ব্যাকটেরিয়ার জন্য কীভাবে বিষাক্ত তা গবেষকদের জন্য জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি নন-অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্টিবায়োটিক থেকে ভিন্ন উপায়ে ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে সক্ষম হয় তবে তা নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির ক্ষেত্রে কার্যকারী প্রতিপন্ন হবে। গবেষকরা জেনেটিক স্ক্রিনিং কৌশল ব্যবহার করে দেখার চেষ্টা করে কীভাবে অ্যান্টিক্যান্সার ওষুধ ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ করে এবং ব্যাকটেরিয়ার পরিব্যপ্তির সময় কোন নির্দিষ্ট জিন এবং কোশীয় প্রক্রিয়ার পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনগুলো কীভাবে ব্যাকটেরিয়ার বেঁচে থাকার উপর প্রভাব ফেলে তা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গবেষকরা অনুমান করতে পারবে কোন প্রক্রিয়ায় এই ওষুধ ব্যাকটেরিয়ার উপর কাজ করে সেগুলো মেরে ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে ভিন্ন ভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যাকটেরিয়া কোশের ভিন্ন ভিন্ন অংশকে টার্গেট করে, যেমন ব্যাকটেরিয়ার কোশ প্রাচীর অথবা ডিএনএ প্রতিলিপি করার পদ্ধতি। সেই অনুসারে অ্যান্টিবায়োটিকগুলো শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে নন- অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া কোশের উপর কাজ করে বা তাদের আক্রমণ করে। গবেষকরা দেখেন পরজীবী সংক্রমণের চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত একটি নন-অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ- ট্রাইক্ল্যাবেন্ডাজল, ব্যাকটেরিয়ার নির্দিষ্ট প্রোটিনকে চিহ্নিত করে তাকে টার্গেট করে। বর্তমানে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকগুলো সাধারণত এই প্রোটিনকে টার্গেট করে না। দেখা গেছে ট্রাইক্ল্যাবেন্ডাজলের মতো একই ধরনের প্রক্রিয়া ব্যবহার করে এমন আরও দুটি নন-অ্যান্টিবায়োটিকও একই প্রোটিনকে টার্গেট করে। ব্যাকটেরিয়া মারা বা প্রতিরোধের বিভিন্ন উপায় রয়েছে যা বিশেষজ্ঞরা এখনও ব্যবহার করেননি এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এখনও বহু রাস্তা খোলা রয়েছে যা বিজ্ঞানীদের খুঁজে দেখতে হবে।