জুলাইয়ে উরুগুয়ের সমুদ্র সৈকতে প্রায় ২০০০ ম্যাগেলানিক পেঙ্গুইনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে নব্বই শতাংশই হল পেঙ্গুইনের ছানা, যাদের পেটে কোনো খাবার নেই আর শরীরে কোনো চর্বি জমা নেই। অত্যন্ত রোগা শরীরে এরা তটে এসে পড়েছিল। এদের এই ব্যাপক মৃত্যুর কারণ অজানা হলেও বিজ্ঞানীরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন যে চরম জলবায়ু পরিবর্তন এই প্রজাতির দ্রুত বিপন্নতার কারণ হতে পারে।
২০০৪ সাল থেকে, বিশেষজ্ঞরা ম্যাগেলানিক পেঙ্গুইন (Spheniscus magellanicus) বিপন্নতার সম্মুখীন বলে বিবেচনা করেছেন এবং গত ৩০ বছরে বা তারও বেশি সময় ধরে, দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূলে এই প্রজাতির শত শত মৃতদেহ দেখা যাচ্ছে। যেমন ২০১০ সালে ব্রাজিলের সমুদ্রতটে অনাহারে মৃত ৫৫০ টা পেঙ্গুইন পাওয়া গিয়েছিল। এর দুবছর পর ৭৪৫ টা মৃত পেঙ্গুইন তটে আবার পাওয়া গিয়েছিল। পেঙ্গুইনের এত গণমৃত্যু কারণ কিন্তু একাধিক।
যেমন ২০১৯ সালে আর্জেন্টিনায় ৩৫৪ টা পেঙ্গুইনের মৃত্যুর কারণ ছিল তাপপ্রবাহ। অনেক সময়ে এদের মৃত্যুর কারণ হাইপোথার্মিয়া, ঝড়, অনাহার। খুব ঠান্ডা তাপমাত্রায় দীর্ঘায়িত সময় থাকলে হাইপোথার্মিয়া হয়। ঠাণ্ডা তাপমাত্রার সংস্পর্শে এলে, শরীরে তাপ হারানোর হার তাপ উত্পাদনের হারের চেয়ে অনেক দ্রুত হয়। দীর্ঘ সময়ে এই পরিস্থিতি থাকলে শরীরের সঞ্চিত শক্তি ব্যবহার হতে থাকে, যা শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। পেঙ্গুইনদের পরিযায়ী হওয়ার স্থানের সঙ্গে মৃত্যুর কারণ যুক্ত।
গ্রীষ্মের বেশিরভাগ সময়, ম্যাগেলানিক পেঙ্গুইন দক্ষিণ আর্জেন্টিনায় বাসা বাঁধে। শীতকালে তারা খাদ্য এবং উষ্ণ জলের সন্ধানে উত্তর দিকে চলে যায়। এই যাত্রার সময় কিছু পেঙ্গুইন ছানার মৃত্যু হওয়া অস্বাভাবিক নয়, তবে সাম্প্রতিক মৃত্যুর সংখ্যা এর ঊর্দ্ধে চলে গেছে। এই বছর, বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ উরুগুয়ের উপকূলে একটি উপক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় ক্ষুধার্ত পেঙ্গুইনদের দুর্বল করে দিয়েছে। এই তত্ত্বের সমর্থনে দেখা গেছে অন্যান্য কিছু সামুদ্রিক পাখি, কচ্ছপ এবং সি লায়ন -কেও আশেপাশের এলাকায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
উরুগুয়ের সমুদ্র সৈকতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মৃত পেঙ্গুইনদের দেহ পরীক্ষা করে দেখা গেছে তাদের এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়নি। কিন্তু তাদের পেটে কয়েকদিন ধরে খাবার ছিল না। তাদের পালকগুলোতে চমক, তৈলাক্ততার অভাব দেখা যায়, এই তৈলাক্ততা পালককে জলে ভিজতে দেয়না এবং পাখিদের ঠান্ডা তাপমাত্রায় গরম রাখে।
দক্ষিণ আটলান্টিকে অত্যধিক মাছ ধরার ফলে খাদ্যের ঘাটতি এবং সমুদ্র স্রোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এই পাখিদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে বলে প্রাণী কল্যাণ সংস্থা SOS Rescate de Fauna Marina জানিয়েছে। এই মৃত্যুর সাথে ঝড়ের সম্পর্ক থাকলেও, আসল কারণ হল খাদ্য না থাকায় তাদের শক্তির অভাব ঘটেছে, ফলে তারা ঝড় মোকাবেলা করতে পারেনি।
বিজ্ঞানীরা জানান যে ম্যাগেলানিক পেঙ্গুইনরা ১৯৯০- এর দশক থেকে খাবারের জন্য সংগ্রাম করেছে, বিশ্বের এই অংশে পেঙ্গুইনদের জন্য অ্যাঙ্কোভি, সার্ডিন এবং অন্যান্য মাছ তাদের খাবার জন্য নিশ্চিত করার প্রয়াস নেওয়া হয়নি। মানুষের অতিরিক্ত মাছ ধরা একটা মূল কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার ধরণ পরিবর্তন হচ্ছে, যা সমুদ্রের প্রাণীর বন্টনে পরিবর্তন আনতে পারে। আর্জেন্টিনায় ম্যাগেলানিক পেঙ্গুইন ১৯৯০ – এর দশকে ৩০০০০০ থেকে ২০০৯ সালে, মাত্র ২০০০০০-এ চলে গিয়েছিল। মানুষ সচেতন না হলে, এই প্রজাতির ব্যাপক মৃত্যু সাধারণ একটি বার্ষিক ঘটনায় পরিণত হতে পারে।